শুক্রবার গাইবান্ধায় স্মরণ সভায় এ হতাশার কথা জানান নিহত পুলিশ সদস্য হযরত আলীর স্ত্রী লায়লা আকতার।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির জামাত-শিবিরের এ হত্যাকাণ্ডকে ‘পুলিশ হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। প্রতিবছরের মত এবারও বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের স্মরণ করছে পুলিশ বাহিনী।
নিহতরা হলেন-রংপুরের পীরগাছা উপজেলার রহমত চর গ্রামের তোজাম্মেল হক, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কিশামত গোবধা গ্রামের হযরত আলী, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামের বাবলু মিয়া ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার খামার ধনারুহা গ্রামের নাজিম উদ্দিন।
ওই হত্যাকাণ্ডের সাত বছরপূর্তিতে পুলিশের স্মরণসভায় লায়লা বলেন, সরকারিভাবে প্রত্যেক নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা থাকলেও তারা এ পর্যন্ত ৮ লাখ টাকা পেয়েছেন।
সাত বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশও করেন তিনি।
তাদের পরিবারের আর্থিক কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে আরেফা বলেন, তারা পরিবারের এসএসসি পাস করা বড় ছেলের জন্য নানা জনের কাছে ধর্না দিয়েও চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেননি।
ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা না পাওয়া প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। এমন হয়ে থাকলে আমি ব্যবস্থা নেব।
২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার দিন সুন্দরগঞ্জে হরতাল ডাকে জামায়াতে ইসলামী। সেদিন সকাল থেকে উপজেলার কঞ্চিবাড়ি, বেলকা, দহবন্দ, হরিপুর, বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, রামজীবন ও ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করে জামায়াত-শিবির।
সেদিন দুপুরে সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব। বামনডাঙ্গা বাজার, শোভাগঞ্জ বাজার, ছাইতানতলা বাজার, বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন, রেলের প্রকৌশল অফিস, বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, নিহত সাবেক এমপি লিটনের ইসলাম শিপ বিল্ডার্সের কার্যালয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, আওয়ামী লীগ নেত্রী হাফিজা বেগম কাকলীর বাড়িসহ উপজেলা বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা; উপড়ে ফেলে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনের রেল লাইন।
এ ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপ-পরির্দশক (এসআই) আবু হানিফ বাদি হয়ে ৮৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও আড়াই হাজার জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ২৩৫ জনকে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় প্রধান আসামি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি গাইবান্ধা-১ আসনের সাবেক এমপি জামায়াত নেতা আবদুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজকে। তিনিসহ মূলহোতারা এখনও এখন পালাতক রয়েছেন।
এ মামলায় ৭৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হলেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাইবান্ধা জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শফিকুল ইসলাম শফিক এবছরই রায় পাওয়র আশা করছেন।
শফিকুল বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার কারণে মামলার বিচার কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি স্বাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যেই মামলাটির রায় হবে।
গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জামিনে থাকা আসামিদেরও নজরে রাখার এবং মামলার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা ও তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল্লাহিল জামানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল আউয়াল, বামনডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা, সুন্দরগঞ্জ ডি ডাবলু সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ হাবিব সরকার, প্রেসক্লাব সভাপতি রশিদুল আলম চাঁদ, সুন্দরগঞ্জ আ’লীগের সভাপতি আহসানুল করিম চাদ, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল আলম, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল মান্নান মন্ডল, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) তাজুল ইসলাম, বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি শম্স উদ্দিন বাবু প্রমূখ। পরে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সংবর্ধনা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।