মুক্তিপণ আদায়ে ‘অপহৃতের’ স্ত্রীসহ ৪ আটক

নরসিংদীর রাসেল হাসান নামের এক যুবককে অপহরণ ও মুক্তিপণের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে তার স্ত্রীসহ চারজনকে নারায়ণগঞ্জে আটক করেছে র‌্যাব।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2020, 02:41 PM
Updated : 22 Feb 2020, 02:41 PM

শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাব-১১ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, আগের রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নরসিংদী জেলা সদর থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন রাসেল হাসানের স্ত্রী মারিয়া আক্তার মন্টি, মন্টির সাবেক স্বামী অভিত মিয়া, মন্টির বাবা বাদল মিয়া ও বড় ভাই পাপ্পু মিয়া। এরা নরসিংদী সদরের বাসিন্দা।

গত ২৮ ডিসেম্বর সাত-আটজন ব্যক্তি নরসিংদী আদালতের সামনে থেকে রাসেল হাসানকে অপহরণ করে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলেপ উদ্দিন বলেন, আটককৃতরা সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। তারা বিত্তবানদের কৌশলে অপহরণের পর শারীরিক নির্যাতন করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ হাতিয়ে নিয়ে থাকে।

“রাসেলের স্ত্রী মন্টি আরও চার-পাঁচটি বিয়ে করে ওই স্বামীদেরও একইভাবে নির্যাতন ও জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য র‌্যাবের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।”

রাসেলের স্ত্রী মন্টি, শ্বশুর ও স্ত্রীর বড় ভাইয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ আদায় করতে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে বলে আলেপ উদ্দিন জানান।

সৌদি প্রবাসী রাসেলের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে মন্টি তাকে বিয়ে করে জানিয়ে  সংবাদ সম্মেলনে আলেপ মিয়া বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণকারী চক্রের সাত-আটজন রাসেলকে নরসিংদী আদালতের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

“রাসেলকে অচেতন করে একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে এবং পরিবারের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ আনার দাবি করে অপহরণকারীরা। এক পর্যায়ে রাসেলের পরিবারের সাথে দুই লাখ টাকায় রফা হলে বিকাশের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা আদায় করে অপহরণকারীরা।

“বাকী টাকা আদায় করতে পরদিন ২৯ ডিসেম্বর রাসেলকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে বের হয় তারা। পথে রাসেল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কথা বললে তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এ সময় রাসেল ডাকাত বলে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।”

আলেপ মিয়া জানান, রাসেলকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে অপহরণকারীরা মামলা না করতে হুমকি দিতে থাকে। কিছুদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে রাসেল নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে গিয়ে অপহরণের বর্ণনা দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব চারজনকে আটক করে।

রাসেল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, তাকে নির্যাতনের লোমহর্ষক ভিডিও ধারণ করে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে টাকা আদায় করে অপহরণকারী চক্র। এ ভিডিওচিত্র দেখে মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

রাসেল আরও বলেন, ২০১৮ সালে নরসিংদী জেলা সদরের সাটিরপাড়ায় চাচাত ভাইয়ের টেইলারের দোকানে মারিয়া আক্তার মন্টির সঙ্গে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছয় মাস পর সৌদি আরবের ভিসা পেয়ে সেখানে যাবার ১৮ দিন আগে আদালতে তাদের বিয়ে হয়। তিনি সৌদি আরব চলে গেলে মন্টির ভাইকে বিদেশে পাঠানো কথা বলে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মন্টির পরিবার।

তিনি বলেন, দুই বছর পর দেশে ফিরে এলে পুনরায় টাকা দাবি করে নানাভাবে মানসিক চাপসহ মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়েও তাকে হয়রানি করে মন্টি ও তার পরিবার।

“স্ত্রী মন্টির করা ধর্ষণের মামরায় ১৩ দিন কারাবাস শেষে জামিনে বের হয়ে এলে মামলা মীমাংসার কথা বলে মন্টির বড় ভাই পাপ্পু মিয়া গত ২৮ ডিসেম্বর আমাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে শারীরিক নির্যাতন চালায়।” 

আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতকদের শনাক্ত করা হয়েছে। শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানায় র‌্যাব।