নোয়াখালীর আইনজীবী নেতা শামছুল ইসলাম আর নেই

নোয়াখালীর আইনজীবী নেতা মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শামছুল ইসলাম আর নেই।

নোয়াখালী প্রতিনিধিআবু নাছের মঞ্জু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2020, 12:27 PM
Updated : 10 Sept 2020, 08:32 PM

হাট অ্যটাকে মঙ্গলবার রাতে মাইজদী শহরে এই আইনজীবীর মৃত্যু হয় বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি শামছুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য। তিনি জেলা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটিরও সদস্য ছিলেন।

প্রয়াতের বড় ছেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক মুনীরুল ইসলাম জানান, রাত ৯টায় শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুরে নিজ বাসভবনে তিনি হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বুধবার সকাল ১০টায় জেলা জজ আদালত ভবন প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর স্বজনরা তার মরদেহ জন্মস্থান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে বাদ জোহর বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

প্রথম জানাজায় নোয়াখালীর জেলা ও দায়রা জজ সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রাছুল মামুন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল গোফরান ভূইয়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবিএম জাকারিয়া, আবদুর রহমান, আবদুর রহিম, জিপি আবদুল মান্নান, পিপি গুলজার আহমেদ জুয়েল, নোয়াখালী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টুসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।

প্রয়াতের স্মৃতিচারণ করে আইনজীবী নেতারা বলেন, একজন সৎ ও নীতিবান আইনজীবী হিসেবে সামছুল ইসলাম হতদরিদ্র মানুষের ‘আস্থা ও ভরসাস্থল’ ছিলেন। তার মৃত্যুতে আইনজীবী সমাজ তাদের একজন আদর্শ অভিভাবককে হারিয়েছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রাছুল মামুন জানান, শামছুল ইসলাম অন্তত ১৫ বার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া অসংখ্যবার যুগ্ম সম্পাদক ও সদস্য নির্বাচিত হন।

জেলা জজ আদালত ভবনের সামনে শামছুল ইসলামের প্রথম জানাজা হয়

শামছুল ইসলাম জেলা শহরের এমএ রশীদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া তিনি রোটারি ক্লাবসহ নানা সমাজসেবামূলক সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।

শামছুল ইসলামের জন্ম ১৯৪১ সালে তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মহকুমার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে। বাবার কর্মসূত্রে তার পড়াশোনা মাগুরা ও কুষ্টিয়া এলাকায়। ষাটের দশকে ছাত্রজীবনে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ওই এলাকায় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন শামছুল ইসলাম। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে মাগুরা কলেজ ছাত্র সংসদে ভিপি প্রার্থী ছিলেন তিনি। তখন তিনি শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী নামে পরিচিত ছিলেন।

১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেওয়ার পর নিজ এলাকায় ফিরে আওয়ামী লীগ গঠনে সক্রিয় হন তিনি। তখন তিনি ছিলেন উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও এক মেয়াদে পালন করেন তিনি। পাশাপাশি বিএড ডিগ্রি নিয়ে পালপাড়া ডিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও শুরু করেন।

১৯৭৩ সালে নোয়াখালী বারে ফিরে আইন পেশায় থিতু হন শামছুল ইসলাম; তারপর সক্রিয় ছিলেন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদে।

জন্মস্থান বিনোদপুরে মরদেহ নেওয়া হলে সেখানে জানাজার আগে শামছুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। পালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিনোদপুরমুখী রাস্তাটি শামছুল ইসলাম সড়ক নামে করার ঘোষণাও দেন উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা।

শামছুল ইসলাম স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। বড় ছেলে মুনীরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক, মেজ ছেলে জহিরুল ইসলাম টিভির অনুষ্ঠান প্রযোজক। ছোট ছেলে তারিকুল ইসলাম রিপন বাবার পেশায় আছেন। রিপন নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের এপিপি। তাদের একমাত্র বোন শারমিন ইসলাম শিক্ষকতায় যুক্ত।