শহীদ জোহাকে স্মরণ, জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহাকে নানা আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণ করা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2020, 01:20 PM
Updated : 18 Feb 2020, 01:20 PM

মঙ্গলবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ ভবনে ভবনে কালো পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাকে স্মরণের আনুষ্ঠানিকতা।

ঊনসত্তরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন এ বুদ্ধিজীবী।

মঙ্গলবার তাকে স্মরণ করতে গিয়ে আবারও তার মৃত্যু দিবসকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কয়েক বছরে থেকে রাবির ছাত্র শিক্ষকরা এ দাবি জানিয়ে আসছেন।

সকাল ৭টায় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ কর্মকর্তারা শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন ইত্যাদি প্রভাত ফেরি করে এসে শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে।

সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা।

এতে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন রাবির সাবেক উপাচার্য ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার অধ্যাপক এম সাইদুর রহমান খান।

রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বক্তব্য দেন।

জোহাকে ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রীতির জলন্ত দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে সাইদুর রহমান খান বলেন, “ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার সার্জেন্ট জহরুল হককে ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলখানায় গুলি করে হত্যা করা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ্ কলাভবনের সামনের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ড. জোহা বলেছিলেন, ‘যেকোন ছাত্রের শরীরে গুলি লাগার আগে যাতে আমার গায়ে গুলি লাগে।’ জোহা তার জীবনদানের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করে গেছেন।’

জোহার আত্মত্যাগের মাধ্যমে ঢাকায় সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে প্রতিবাদ শুরু হয়। জোহা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও তরান্বিত হয়। তবে দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করা হয়নি যা আমাদের ব্যথিত করে।”

স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানেও শহীদ জোহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সেখানে শহীদের জীবনালেখ্য উপস্থাপন করা হয়।

জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার জন্য মানববন্ধন

এদিকে দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানববন্ধনে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, “দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী যেভাবে ছাত্রদের জন্য, দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তা পৃথিবীতে বিরল। অথচ রাষ্ট্র তাকে সেভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। আমরা চাই, এই মুজিববর্ষেই ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করুক সরকার।”

এছাড়া দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবিতে সপ্তাহব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়।

সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, “শহীদ জোহা তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে তরান্বিত করেছেন। তার অবদানকে আমাদেরকে স্বীকৃতি দিতেই হবে। এ দাবিতে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর নিচ্ছি।”

জোহা দিবসে বইমেলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নবজাগরণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহাকে উৎসর্গ করে সপ্তাহব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী প্রশাসন ভবনের সামনে সপ্তাহব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।

এ সময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয় কিন্তু মনুষ্যত্ব বিকাশে পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রজীবনে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা আবশ্যক।

নবজাগরণের সভাপতি খালিদ হাসান বলেন, “বই মানুষের জ্ঞানের উৎস আর সেরা বন্ধু, তাই মানুষের জীবনে এর বিকল্প নাই। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের একজন মহান মানুষ ড. শামসুজ্জোহার প্রতি উৎসর্গ করে এই বইমেলা।”

দিবসের কর্মসূচিতে আরো ছিল অফিসার সমিতি কার্যালয়ে আলোচনা সভা, বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে দোয়া মাহফিল, প্রদীপ প্রজ্বালন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।