চীন যেন ‘ভূতুড়ে’ দেশ, ‘সবার চোখে আতংক’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়ানোর পর পুরো চীন যেন এক ভূতুড়ে দেশে পরিণত হয়েছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2020, 04:00 PM
Updated : 17 Feb 2020, 05:55 PM

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটি যেন কয়েকদিনের মধ্যে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। মানুষের চোখে মুখে আতংকের ছাপ। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করছে। বাস স্ট্যান্ড, ট্রেন স্টেশন, বিমান বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মেডিকেল চেক আপ চলছে।

নিজ চোখে দেখা চীনের সাম্প্রতিক চিত্রের বর্ণনা করেছেন সেদেশ থেকে সম্প্রতি ফেরা এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার এই তরুণ (২০) জিয়াংশু প্রদেশের নানজিং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইকোনোমিক্সে লেখাপড়া করছেন।  

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণার পর তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন। তবে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে অনলাইনে তাদের ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

সেদেশে থাকার সময় তার দেখা নানা ঘটনা ও মানুষের জীবনযাপনে আসা পরিবর্তনের বর্ণনা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথোপকথনে।

এই শিক্ষশার্থী বলেন, জিয়াংশু প্রদেশের নানজিং ইউনিভাসিটি অব ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির উসি ক্যাম্পাসে গত এক বছর ধরে লেখাপড়া করছেন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইকোনোমিক্সে। প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া উহান প্রদেশ থেকে ১২শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে আসার সময় যাত্রীর অভাবে উসির ফ্লাইটগুলো বাতিল হয়ে গিয়েছিল। পড়ে ট্রেনে সাংহাই গিয়ে সেখান থেকে বিমানে ঢাকা আসেন।

উসি থেকে ট্রেনে যাওয়ার সময় তিনি যে কামরায় উঠেছিলেন সেখানে ছিল মাত্র ১০ জনের মতো যাত্রী; স্বাভাবিক সময়ে সেখানে ৫০ জনের মতো যাত্রী থাকে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “আগেই শুনেছিলাম করোনাভাইরাসের কারণে উহান ভূতুরে নগরীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে জিয়াংশু প্রদেশেও একই অবস্থা দেখলাম।

“রাস্তা, রেল স্টেশন, বিমানবন্দর, বিভিন্ন মার্কেট একেবারে ফাঁকা। ঘর থেকে খুব জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। কর্মচঞ্চল চীন যেন করোনার কারণে ঘুমিয়ে পড়েছে।”

অথচ এই দেশটির মার্কেট, রাস্তা, বিমানবন্দর, স্টেশন সবসময় থাকত প্রাণচঞ্চল এবং মানুষের ভিড়ে ঠাসা।

বাংলাদেশি এই শিক্ষার্থী বলেন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০ জনের অধিক বাংলাদেশি ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। এছাড়া ২৫টি দেশের সাতশরও বেশি ছাত্রছাত্রীও পড়ালেখা করে।

তিনি জানান, ডিসেম্বরের শেষে যারা ক্যাম্পাস থেকে অন্য প্রদেশে বেড়াতে গিয়েছিল তাদের ফেরার পর একটি রুমে ১৪ দিন রেখে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। জানুয়ারির ২০ তারিখ থেকে ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়া ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ১৩ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বার বার নানা রকম সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

এই শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ২০ জানুয়ারি বলে, বাইরে গেলে এক ঘণ্টার বেশি থাকা যাবে না; কোনো কেনাকাটা থাকলে একঘণ্টার মধ্যে সেরে ফিরে আসতে হবে। ২৪ জানুয়ারি আবার বিজ্ঞপ্তি দেয়, ক্যাম্পাসের বাইরে একেবারেই যাওয়া যাবে না; এমনকি এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে আড্ডা দিতেও যাওয়া নিষেধ। এই পর্যায়ে জানানো হয়, ১০ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হবে।

তিনি জানান, ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জিয়াংশু প্রদেশে কয়েকজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে এই প্রদেশ থেকে তাদের অন্যত্র নেওয়া হয়। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ দেশে ফিরতে ছোটাছুটি শুরু করে।

ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তার মেডিকেল চেক-আপ করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, “ঢাকায় আমাদের সমস্ত ডাটা নিয়ে বলা হয়েছে অসুস্থ বোধ করলে যেন তাদের সাথে যোগাযোগ করি। আপাতত লোক সমাগম থেকে দূরে থাকতে এবং বাসায় সময় কাটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”