মাকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছে দুই ভাই বোন- ছয় বছরের ফাহমিদা ইসলাম আর চার বছরের আব্দুস সালাম। ওমানপ্রবাসী বাবা আলিমুজ্জামানকেও তারা কাছে পাচ্ছে না।
সালাম জানতে চাইছে, তার মা বিদেশে বাবার কাছে চলে গিয়েছে কি না; টেলিফোনে তাকে সেই প্রবোধই দিচ্ছেন তার বাবা।
কোটালীপাড়ার সোনারগাতী গ্রামের বাসিন্দা আলিমুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা মঙ্গলবার দুপুরে নদীতে লাফ দেন বলে পুলিশের ভাষ্য। খবর পেয়ে টুঙ্গিপাড়া ফায়ার সার্ভিস নদীতে তল্লাশি চালালেও এখনও তার সন্ধান মেলেনি।
আফরোজার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে ওসি এএফএম নাসিম জানিয়েছেন।
টুঙ্গিপাড়া ফায়ার স্টেশনের অফিসার সরকার শরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দুটি ট্রলার নিয়ে নদীতে ওই গৃহবধূর সন্ধান করছি। আমাদের ডুবুরি দলের সঙ্গে তার স্বজনরা রয়েছেন।”
আফরোজা টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা গ্রামে ভাড়াবাড়িতে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। তার মেয়ে ফাহমিদা গওহরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলেটি এখনও স্কুলে যায় না।
তার সন্তানরা টুঙ্গিপাড়ার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে তার বাবার বাড়িতে রয়েছে। তারা মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছে, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে তাদের মামী ফাতেমা বেগম জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ফাহমিদা ও আব্দুস সালাম ফোনে তার বাবা আলিমুজ্জামানের সাথে কথা বলেছে। তাদের মা বিদেশে তার কাছে গেছে কি না জানতে চাইলে আলিমুজ্জামান তাদের আশ্বস্ত করে বলেছে, তাদের মা তার কাছে আছে, বাড়ি আসার সময় তাকে নিয়ে আসবেন।
আফরোজার মেয়ে ফাহমিদা জানায়, তাদেরকে ব্রিজের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে তার মা ‘নদীতে টাকা পড়ে গেছে, তুলে আনতে যাচ্ছি’ বলেই ঝাঁপ দেয়।
আফরোজার বড় বোন মাকসুদা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আলিমুজ্জামানের সঙ্গে ২০১১ সালে তার বোনের বিয়ে হয়। একটু রাগ হলেই সে ক্ষেপে গিয়ে একাধিকবার ‘আত্মহত্যা করতে উদ্যত’ হয়েছিল।
“মঙ্গলবার রাতে আফরোজাকে তিন হাজার টাকা পাঠায় তার স্বামী। এতে বাজার খরচ, ঘরভাড়া ও অন্যান্য ব্যয় মেটানো সম্ভব নয় বলেই ক্ষিপ্ত হয়ে সে এঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পরে বলে ধারণা করছি।”
তার ভাই মোহাম্মদ উল্লাহও বলেন, আফরোজার স্বামী পাঁচ বছর আগে ওমান যায়। ঠিকমতো টাকা না পাঠানোর কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত।
প্রতক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি নাসিম জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ইজিবাইকে করে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সেতুর মাঝখানে নামেন বোরকা পরা এক নারী।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সন্তানদের কাছে তার মোবাইল ফোন ও ব্যাগ রেখে মধুমতি নদীতে লাফ দেন।তখন তার সন্তানদের চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়। তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।