ক্যালকুলেটর ব্যবহারে বাধা: মাদারীপুরে এসএসসি কেন্দ্রে ভাংচুর

এসএসসির গণিত পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ভাংচুরের মধ্যে মাদারীপুরের শিবচরে কেন্দ্র সচিব ও সহকারী কেন্দ্র সচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2020, 11:34 AM
Updated : 12 Feb 2020, 11:48 AM

একই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এসএসসির গণিত পরীক্ষায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশনে ক্যালকুলেটর নিয়ে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিদ্যালয় কেন্দ্রেও কয়েকজনের কাছ থেকে ক্যালকুলেটর নিয়ে নেওয়া হয় বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

এর প্রতিবাদে বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা শেষে নন্দ কুমার মডেল ইনস্টিটিউশনে ভাংচুর করে শিক্ষার্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও ভাংচুর করে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই ভাংচুরে দুটি বিদ্যালয়ের ভবনের দরজা, জানালা, চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকজন আহও হন বলে উপজেলা প্রশাসন ও কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

প্রোগ্রামিং করা যায় না এমন ক্যালকুলেটর এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ক্যালকুলেটরই শিক্ষার্থীদের নিতে দেওয়া হয়নি।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসএসসি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনায় উপজেলার এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব মো. রফিকুল ইসলাম ও সহকারী কেন্দ্র সচিব মো. হারুন-অর-রশিদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ওই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

“ওই দুইজনের স্থলে পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলমকে কেন্দ্র সচিব ও পাচ্চর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম সিরাজীকে সহকারী কেন্দ্র সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

ইউএনও আরও জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিশ্বজিৎ রায়কে প্রধান করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম ও শিক্ষক প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামসুল আলমকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

“তিন কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত তদন্ত কমিটিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তদন্তের রিপোর্ট প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসএসসি পরীক্ষায় সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর পরীক্ষায় ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও মঙ্গলবার গণিত পরীক্ষায় শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়। এ কারণে তাদের গণিত পরীক্ষা খারাপ হয়।

অপর দিকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রেও বেশ কয়েকটি কক্ষ থেকে কেন্দ্র সচিবের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ক্যালকুলেটর নিয়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা শেষে প্রথমে শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। এ খবর শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছালে সেখানেও ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এই সময় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুর চালায়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে।

অব্যাহতি পাওয়া কেন্দ্র সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনের ভেনুতে ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। শেখ ফজিলাতুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় ভেনুতেও একটি কক্ষে ক্যালকুলেট নিয়ে নেওয়া হয়। তবে পরে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

“এরপর প্রতিবাদে আজ বুধবার প্রথম নন্দকুমার ভেনুতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাংচুর চালায়। পরে দ্রুত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় ভেনুতেও ভাঙচুর চালায়।” 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, “মঙ্গলবার এসএসসি সাধারণ গণিত পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশের বাধা দেওয়া হয়। গণিত পরীক্ষা বিঘ্নিত হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে। গতকালের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার আইসিটি পরীক্ষা শেষে উত্তেজিত হয়ে এসএসসি পরীক্ষার দুইটি ভেন্যুতে ভাঙচুর করে।”

‌শিবচর থানার ওসি আবুল কালাম ব‌লেন, বর্তমা‌নে প‌রি‌স্থি‌তি শান্ত। পু‌রো বিষয়‌টি আমরা খতি‌য়ে দেখ‌ছি।