দালাল ধরে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার পথে রোহিঙ্গাদের ওই ট্রলারটি মঙ্গলবার ভোরে সেন্ট মার্টিন থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে দুর্ঘটনায় পড়ে বলে কোস্ট গার্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কোস্ট গার্ড সেন্ট মার্টিন স্টেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার নাঈম উল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৭১ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কোস্ট গার্ড সদস্যদের পাশাপাশি নৌবাহিনীর জাহাজ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে।
“নিহতদের মধ্যে চারজন শিশু, বাকিরা নারী। ওই ট্রলারে ১৩৮ জন ছিল বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।”
কোস্ট গার্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের একটি বড় দল অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার আশায় সোমবার গভীর রাতে টেকনাফের নোয়াখালীয়াপাড়া থেকে মাছ ধরার দুটি ট্রলারে চেপে রওনা হয়।
এর মধ্যে একটি ট্রলার ভোর পৌনে ৬টার দিকে সাগরে দুর্ঘটনায় পড়ে ডুবতে শুরু করলে জেলেরা তা দেখে কোস্ট গার্ডকে খবর দেয়।
তিনটি স্টেশন থেকে কোস্ট গার্ড সদস্যরা গিয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তাদের সঙ্গে অভিযানে যোগ দেয় নৌবাহিনীর জাহাজ দুর্জয়।
কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা নাঈম উল হক বলেন, “আরও ৫২ জনের নিখোঁজ থাকার তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন জানান, জীবিতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য বিমানবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। তাদের দুটি হেলিকপ্টার এ কাজে সহযোগিতা করেছে।
নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় দুর্ঘটনায় পড়া ট্রলারটি টেনে সেন্টমার্টিনে নিয়ে আসা হয়েছে। মূলত ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় সেটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে কোস্ট গার্ডের ধারণা।
নাঈম উল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে রওনা হওয়া অন্য ট্রলারটির কোনো খোঁজ তারা পাননি। সেটি ইতোমধ্যে মিয়ানমারের জলসীমায় চলে গেলে বলে তারা মনে করছেন।
জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪৬ জন নারী ও ২৫ জন পুরুষকে সেন্টমার্টিনের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে হতাহতদের থানায় হস্তান্তর করা হয়।
কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. সোহেল রানা বলেন, নিহতদের লাশ মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৫টায় টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া সংলগ্ন ট্রানজিট ঘাটে আনা হয়; পরে টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জীবিতদের সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ আনা হবে।
“এছাড়া জীবিত উদ্ধারদের মধ্যে ৪ জনকে দালাল সন্দেহ আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন রোহিঙ্গা এবং ২ জন বাংলাদেশি নাগরিক।”
“এর পরপরই নম্বরটিতে কল দিয়ে দুর্ঘটনার বিষয়টি কোস্টগার্ডকে জানালে সকালের দিকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়।”
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রথমে একটি পাহাড়ে কয়েকদিন রাখা হয়েছিল। পরে সোমবার গভীর রাতে তাদের ট্রলারে তোলা হয়।
তবে পুলিশ কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।