নীলফামারীতে তৃষ্ণার আত্মহত্যা: প্রধান শিক্ষক কারাগারে

নীলফামারীতে এসএসসি পরীক্ষার্থী তৃষ্ণা রাণী রায়কে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2020, 03:46 PM
Updated : 10 Feb 2020, 03:46 PM

সোমবার দুপুরে নীলফামারী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মাসুদ রানা এ আদেশ দেন বলে আসামির আইনজীবী জানিয়েছেন।

আসামি সিরাজুল হক ডোমার মাহিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

ডোমার মাহিগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থী তৃষ্ণা রাণী দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাণিজ্য বিভাগে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবার কথা ছিলেন। তবে শিক্ষা বোর্ড থেকে তার প্রবেশপত্র আসে মানবিক বিভাগের। গত ২ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ‘অশোভন ব্যবহার’ করায় স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে আত্মহত্যা করেন ওই ছাত্রী।

এ ঘটনায় তৃষ্ণার বাবা ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে আসামি করে মামলা করেন।

সিরাজুল হকের আইনজীবী আজাহারুল ইসলাম জানান, সিরাজুলের জামিন প্রার্থনা করা হলে বিচারক জামিন আবেদন স্থগিত করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।

এ আদেশে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি, ইউডি মামলা দায়ের এবং মরদেহের ময়না তদন্ত না করায় ডোমার থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আজম হোসেন প্রধানকে আদালতে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক বলে জানান তিনি।

তৃষ্ণা রাণী রায়ের বাবা দুলাল চন্দ্র রায় বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে পেয়ে সে দেখে- তার প্রবেশপত্রে বাণিজ্য শাখার পরিবর্তে মানবিক শাখা লেখা।

“বিষয়টি জানা গেলে প্রধান শিক্ষক আমার মেয়েকে গালমন্দ করে। ভুল প্রবেশপত্রের কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার হতাশায় বাড়িতে এসে আত্মহত্যা করে তৃষ্ণা।

“আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার কথা নয়, ওই শিক্ষকের গালমন্দের কারণে মেয়ে আমার আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।”

তবে তার আইনজীবী জানান, সিরাজুল হক গত বছরের পহেলা এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সেখানে যোগ দেন। তার আগে সেখানে প্রধান শিক্ষক ছিলেন কোহিনুর ইসলাম।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই তৃষ্ণা রাণী রায় মানবিক শাখার শিক্ষার্থী হিসেবে নবম শ্রেণিতে নিবন্ধিত হন। একারণে তার এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে মানবিক বিভাগই আসে।

“এজন্য দায়ী তৎকালীন প্রধান শিক্ষক কোহিনুর ইসলাম এবং অফিস সহকারী হামিদুর রহমান।”

তৃষ্ণাকে গালমন্দ করেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করে তার আইনজীবী বলেন,“অভিভাবক হিসেবে তৃষ্ণাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসসহ সাহস যুগিয়েছিলেন।

“তার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নিলেও মামলাটি তদন্ত করেনি। তাছাড়া তৃষ্ণা আত্মহত্যা করার পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি, ইউডি মামলা দায়ের এবং মরদেহের ময়না তদন্ত করেনি পুলিশ।

“মামলা তদন্ত না করেই সিরাজুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ।”

তবে ডোমার থানার ওসি বলেন,“তৃষ্ণার আত্মহত্যার খবর পেয়ে তার বাড়ি যায় পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।”

নিহতের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের ময়নতদন্ত না করার আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে এবং একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।