বাংলাদেশ আর ভোটের জায়গায় নেই: মেনন

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কম ভোট পড়াকে গণতন্ত্রের জন্য বিপদ অবিহিত করে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

রাজবাড়ী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2020, 05:18 PM
Updated : 8 Feb 2020, 05:25 PM

শনিবার রাজবাড়ী রেলগেট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্বরে এক সভায় রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলার মানুষ ভোটকে রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। যেই বাংলার মানুষ ভোটকে উৎসব মনে করে, সেই বাংলার মানুষের ভোটের প্রতি আগ্রহ নেই কেন?

সিটির এ নির্বাচনে উত্তর ঢাকায় ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও দক্ষিণ ঢাকায় ২৯ দশমিক ০০২ শতাংশ ভোট পড়ে। গড়ে দুই সিটিতে ভোট পড়ে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়া এই বামনেতা সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে আমি কথা বলেছিলাম। তারজন্য আমার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড কুৎসা রটানো হয়েছিল।

“আমার কথায় প্রমাণিত-এই বাংলাদেশ আজকে আর ভোটের জায়গায় নেই।”

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো সমালোচনা করে আসছে। এক পর্যায়ে বরিশালে এক অনুষ্ঠানে মেনন বলেছিলেন, “আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।”

এরপর ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের ১৪ দলীয় জোটেও আলোচনা ওঠে।

তিনি আরো বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সাথে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ভোটের অধিকার ছিনিয়ে এনেছি। আজকে কেন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।

ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়াকে গণতন্ত্রের জন্য ‘চরম বিপদ’ সংকেত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে সকল গণতান্ত্রিক দল, আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাব ভোটের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনুন। সংগ্রামী জনগণকে আহ্বান জানাব আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনুন।”

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হল। আমিও নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরেছি। মাত্র ২০ থেকে ২৫ ভাগ ভোট পড়েছে। যা খুব হতাশাজনক।

‘সরকার কথা রাখেনি’

‘ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ওয়াদার দাবি করে শেখ হাসিনার আগের মেয়াদের সরকারের মন্ত্রী মেনন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ওয়াদা করেছিল প্রতি ঘরে ঘরে যুবকদের চাকরি দেবে কিন্তু সরকার তাদের কথা রাখেনি।

“যুবকরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির নিশ্চয়তা পায় না।

“আজ বাংলাদেশে এক কোটি ৬ লাখ মানুষ বেকার। বাংলার যুবকের চাকরি নেই। ওই বেকার যুবক তখন জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করে। নারী কর্মীরা নিগৃহীত হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। ওই বর্বররা আমার দেশের মা বোনেদের ইজ্জত লুণ্ঠন করে।”

তবে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলার ব্যাপারে তার ‘কোন সন্দেহ নেই’ উল্লেখ করে রাজবাড়ী জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জ্যোতিশংকর ঝন্টুর সভাপতিত্বে এ সভায় রাশেদ খান মেনন বলেন, গত ১০ বছর আমরা আওয়ামী লীগের সাথে থেকে সেই উন্নয়নের অংশীদার।

“কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে না পারে, তাহলে জোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে।”

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্ব গতিরোধ, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও লুটপাট, ফসলের ন্যায্যমূল্য, সন্ত্রাস সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ প্রতিরোধসহ ২১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ওয়ার্কার্স পার্টির এই সভা।

রাজবাড়ী জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির আয়োজনে এ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, সংগঠনের পলিটব্যুরোর সদস্য আনিচুর রহমান মল্লিক, দীপঙ্কর সাহা, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, আরমান আলী, মওলা বক্স, গোলাম কাদের, মনিরুজ্জামান সালাম।