‘সামান্য ভুলে’ এসএসসিতে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা

নীলফামারীতে কেন্দ্র সুপার ও পরিদর্শকদের ভুলে ২০২০ সালের বদলে পুরোনো সিলেবাস ভিত্তিক প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বাধ্য হলেও সেই কেন্দ্রের সুপার প্রধান শিক্ষক একে দেখছেন ‘সামান্য ভুল’ হিসেবে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2020, 04:01 PM
Updated : 3 Feb 2020, 05:22 PM

সোমবার সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এদিন ছিল বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় নীলফামারী জেলা শহরের রাবেয়া বালিকা নিকেতন কেন্দ্রে অংশ নেন সিলেবাসের ৬২০ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র একজন ২০১৮ সালের পুরোনো সিলেবাসের পরীক্ষার্থী, বাকী সবার ২০২০ সালের সিলেবাস ভিত্তিক প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেবার কথা। তবে কেন্দ্রের ‘৯৮ জন পরীক্ষার্থীকে’ দেওয়া হয় ২০১৮ সালের সিলেবাস ভিত্তিক প্রশ্নপত্র। আর পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক পর শিক্ষার্থীরা নজরে আনেন এ ভুল।

একে ‘সামান্য ভুল’ উল্লেখ করা রাবেয়া বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সুপার মো. মহাফিজুর রহমান খান বলেন, “আমাদের সামান্য ভুলের কারণে যে সমস্যাটা হয়েছিল, তা সমাধান করেছি।

“এটায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।”

তিনি জানান, নতুন সিলেবাসের ৬১৯ জন পরীক্ষার্থী বিপরীতে এক হাজার ২০টি এবং পুরনো সিলেবাসের একজন পরীক্ষার্থীর জন্য ১২০টি প্রশ্নপত্র বরাদ্দ পান তারা। সোমবার সকালে ট্রেজারি থেকে সব প্রশ্নপত্র তুলে গুণে পরীক্ষা শুরু করেন।

পরীক্ষা এক ঘণ্টা চলার পর কেন্দ্রের ৮নং কক্ষের ৯৩ জন এবং ৫ নম্বর কক্ষের পাঁচ পরীক্ষার্থী কক্ষ পরির্দশকদের এ ভুল দেখিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কক্ষ পরির্দশকদের কাছ থেকে বিষয়টি অবগত হয়ে তাৎক্ষণিক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভুল প্রশ্নপত্র ফেরত নেওয়া হয় বলে জানান কেন্দ্র সুপার।

মহাফিজুর রহমান খান বলেন, “আমি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জর হোসেন এবং নীলফামারী জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে ওই ৯৮ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে ২০২০ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র সরবারহ করে, খাতায় লেখা আগের সিলেবাসের উত্তরগুলো কেটে দিয়ে ওই একই খাতাতেই পরীক্ষা নেওয়া হয়।”

তিনি বলেন, “আমাদের কেন্দ্রে সাত বিদ্যালয়ের ৬২০ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে নুতন সিলেবাস অনুযায়ী ৬১৯ জন এবং ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুযায়ী পুরাতন প্রশ্নপত্রে মাত্র একজন পরীক্ষায় দিচ্ছে।”

“নিয়ম অনুযায়ী ট্রেজারি থেকে ৬১৯ জন নতুন সিলেবাসের পরীক্ষার্থীদের জন্যে সাত বান্ডিলে ৭০০ প্রশ্নপত্র এবং এক পরীক্ষার্থীর জন্যে এক বান্ডিলে ১০০ প্রশ্নপত্র বরাদ্ধ করা হয়।”

মহাফিজুর রহমান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যতই হোক না কেনো বান্ডিল খুলে কোনো প্রশ্নপত্র বরাদ্দ দেওয়া হয় না। একজন পুরাতন সিলেবাসের পরীক্ষার্থীর জন্য এক বান্ডিল প্রশ্নপত্র বরাদ্দ ছিল। সেখান থেকে বাকি প্রশ্নগুলো ভুলক্রমে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

তবে এতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ওই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী নীলফামারী কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম মুন্না বলেন,“আমি ২০২০ সালের সিলেভাসের নিয়মিত ছাত্র। পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টায়। আজ আমাদের বাংলা প্রথম পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আমরা নৈবেত্তিক প্রশ্নপত্রের পরীক্ষা দিই।

“এরপর আমাদের রাচনামূলক প্রশ্নপত্র সরবারহ করে কক্ষ পরিদর্শকরা। প্রশ্ন হাতে পেয়েই আমরা খাতায় উত্তর লিখতে থাকি। এক ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর দেখতে পাই আমি যে প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিচ্ছি তা ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র। এ সময় আমি কক্ষ পরিদর্শকদের বিষয়টি জানাই।

“এমন সময় ওই কক্ষে থাকা আরো ৯২ জন পরীক্ষার্থী তাদেরও একই প্রশ্নপত্র সরবারহ করা হয়েছে বলে দাবি করেন। এ সময় কক্ষ পরিদর্শকরা আমাদের প্রশ্নপত্রগুলো নিয়ে নেন এবং বিষয়টি কেন্দ্র সুপারকে অবহিত করেন।

“বেলা ১২টায় কেন্দ্র সচিব আমাদের মাঝে ২০২০ সালের নতুন প্রশ্নপত্র সরবারহ করলে আগের খাতাতেই আমরা পরীক্ষা দিই।”

জিয়া মানিক নামের অপর পরীক্ষার্থী বলেন,“আমাদের নতুন প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হলেও নতুন খাতা সরবরাহ করা হয়নি। যে খাতায় ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্রের উত্তর লিখেছিলাম ওই খাতার সাথে বাড়তি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করে আমাদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। আগের উত্তরগুলো লাল কালি দিয়ে কাটাকাটি করা হয়েছে।

খাতায় এভাবে কাটাকাটি হওয়ায় পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তিনি শঙ্কিত।

শঙ্কা প্রকাশ করে পরীক্ষার্থী সেলিম রেজা বলেন,“তাদের ভুলের মাসুল আমাদের কেন গুণতে হবে?  

বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের খাতা মূল্যায়নে বিষয়টি মাথায় রাখে দাবি তার।

নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন,“বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের সাথে কথা বলে পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর ২০২০ সালের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয় তাদের।

কার ভুলে এমন ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ ভুলের কারণে দুপুর ২টা ২৫ মি. এই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বাধ্য হন।