কুড়িগ্রামে আটকের রাতেই পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু

কুড়িগ্রামে গাঁজাসহ আটকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের হেফাজতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2020, 12:34 PM
Updated : 3 Feb 2020, 12:34 PM

এ মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ ওঠায় সোমবার এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার।

নিহত যুবক মোজাফফর (৩০) উপজেলার উত্তর ছাটগোপালপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াবের ছেলে। তিনি ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা চালাতেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের কোন দায় আছে কিনা তা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে, তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে অটোচালকরা সোমবার দুপুরে ঢলডাঙ্গায় বিক্ষোভ করেন।

এ সময় অটোচালক ইউসুফ এবং নিহতের বড় ভাই আব্দুর রউফ অভিযোগ করেন-পুলিশের অবহেলায় মোজাফফরকে জীবন দিতে হয়েছে।

তারা জানান, মোজাফফর শ্বাসকষ্টসহ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি বলেন তারা। শুধু তাই নয়, থানায় অসুস্থ্ হয়ে পড়লে তাকে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ উপেক্ষা করে মাত্র ১৫ মিনিট প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার থানায় নিয়ে আসা হয়।

দ্বিতীয় দফায় থানায় অসুস্থ্ হয়ে পড়লে তাকে রাত সাড়ে ১২টায় আবারো ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক মোজাফফরকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হলেও পুলিশ কুড়িগ্রামে হসপিটালে ভর্তি করায় ভোররাত সাড়ে ৪টায় বলেন তারা।

বিক্ষোভ করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা।

মোজাফফরকে আটকের বিবরণ দিতে গিয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার এসআই আউয়াল বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার সন্ধ্যায় আমিসহ একদল টহল পুলিশ উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের ঢলডাঙ্গা ঝালবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় পুলিশ সন্দেহজনক একটি অটোরিকশা থামাতে বললে রিকশা থেকে এক যাত্রী ছুটে পালিয়ে যায়। পরে অটোরিকশাচালক মোজাফফরকে আটক করে পুলিশ।

“অটোরিকশাচালকের দেওয়া তথ্যমতে সিটের নিচ থেকে সাড়ে তিন কেজি গাঁজা পাওয়া যায়। গাঁজাসহ তাকে রাত ৮টার দিকে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।

“থানায় আসার পর তিনি অসুস্থ্ হয়ে পড়লে, তাকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত সাড়ে তিনটের দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে।”

অন্যদিকে, ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ রাত সাড়ে ১১টায় মোজাফফরকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

তিনি মারাত্মক শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এছাড়াও যক্ষ্মাসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন।

“প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ১৫ মিনিট পরেই পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়।

“রাত সাড়ে ১২টায় আবারো গুরুতর অসুস্থ্ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। সে সময় আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার জন্য পরামর্শ দিই।“

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস সজীব বলেন, “তাকে মৃত অবস্থায় রাত সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে নিয়ে আসে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ।”

এ ব্যাপারে ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, আটককৃত যুবক এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী এবং মাদক পাচারকারী। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মায় ভুগছিলেন।

“আটকের পর তিনি অসুস্থ্ বোধ করছিলেন। আমরা তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছি। এ ব্যাপারে পুলিশের কোন অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না।”

সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মেনহাজুল আলম জানান, তিনি নিহতের পরিবার, স্বজন, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছেন।

“এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে সবাই নিশ্চিত করছেন নিহত মোজাফ্ফর যক্ষ্মা ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।”

নিহতের ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।