৩৩ বছর পর মা ফিরে পেলেন হারানো মেয়ে

হারিয়ে যাওয়ার ৩৩ বছর পর মায়ের বুকে ফিরে এসেছেন মুন্নি খাতুন (৪০)।

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2020, 03:58 PM
Updated : 31 Jan 2020, 03:58 PM

বৃহস্পতিবার নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের সলইপাড়া গ্রামে ফিরে আসেন মুনছের আলী ও নাজমা বেগমের মেয়ে মুন্নি।

তাকে ফিরে পেয়ে পরিবারে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা।

মুন্নি খাতুন জানান, ১৯৮৬ সালে সাত বছর বয়সে লালপুর উপজেলার মিলকিপাড়া গ্রামে মায়ের সাথে নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান তিনি।

এই জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সলইপাড়া গ্রামের একজন লালপুরের গোপালপুরে গিয়ে তার সাথে পরিচিত হন। নিজের নাম ছাড়া বাবা-মা ও গ্রামের নাম কিছুই মনে করতে না পারেন না তিনি। তবে তাকে বলেন রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া এক নারী তিনি। খবরটি চলে যায় মুন্নির মায়ের কাছে।

বয়সের ভারে মা সেখানে যেতে না পারায় তিনি নিজেই স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সলইপাড়া যান বলে জানান তিনি।

‘তার চোখের পাতার নিচের তিল, হাতে পোড়া দাগ দেখে’ মাসহ আত্মীয় স্বজনরা সবাই নিশ্চিত হন ৩৩ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মুন্নি এই নারী।

মুহূর্তে তারা একে অপরকে আলিঙ্গন করে আনন্দের অশ্রুতে ভেসে যান। ফিরে পাওয়া মুন্নিকে দেখতে স্বজন ছাড়াও গ্রামের মানুষের ভিড় জমে মা নাজমা বেগমের বাড়িতে।

মুন্নি খাতুনের স্বামী আমিরুল ইসলাম জানান, লালপুরে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ (সাধু চেয়ারম্যান) মুন্নিকে লালন পালন করেন। তিনি ওই চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় কাবিনে পালক বাবা হিসাবে চেয়ারম্যানের নামই লেখা হয়েছিল। বর্তমানে তাদের দুই ছেলে রয়েছে।

তিনি আরও জানান, চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মারা যাওয়ার আগে মুন্নিকে কুড়িয়ে পাওয়ার ঘটনা বলে গেছেন।

“১৯৮৬ সালে গোপালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে বসে কাঁদছিল মুন্নি। নাম ঠিকানা বলতে না পারায় তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং তিনিই তাকে লালন-পালন করেন। তিনি সেখানে আছিয়া বেগম নামে বড় হয়েছেন।

“পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়ার দুঃখ আমার স্ত্রী ভুলতে পারত না। শেষ পর্যন্ত তার মাকে পেয়ে সে খুব শান্তি পেয়েছে।”

মা নাজমা বেগম বলেন, “মিয়াক (মেয়েকে) খুঁজি পাবো তা ভাবতেও পারিনি। মিয়া আমার কত্তবড় হয়ছে। যকন হারায় গিছিলো তকন হাফপ্যান্ট পরি থাকতো। আর একন শাড়ি পরি আইছে। ওর কাটা দাগ আর তিল দেকতে না পারলে চিনতেই পারতাম না।”