যুবককে আটকে রাখল পুলিশ; জমি ‘বেদখল’ করল ক্ষমতাশালীরা

ময়মনসিংহের ভালুকায় যুবককে থানায় আটকে রাখার সুযোগ নিয়ে জমি বেদখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2020, 11:14 AM
Updated : 18 Jan 2020, 11:14 AM

এ ঘটনায় ‘বিশৃঙ্খলা এড়াতেই’ ওই যুবককে থানায় বসিয়ে রাখা হয় বলে ভাষ্য পুলিশের।

ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর উত্তর বাজার সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ১৬ শতাংশ জমি নিয়ে পাঁচ বছর ধরে বিরোধ চলছে আমজাদ আলী ফকির ও রমজান আলী ডিলারের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।

২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর বিরোধপূর্ণ এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। ১৯ অক্টোবর আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ভালুকা সহকারী কমিশনার ভূমিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ৩০ নভেম্বর সহকারী কমিশনার ভূমি সাখাওয়াত হোসেন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন।

এ তদন্ত প্রতিবেদনে হাফিজ মহিউদ্দিনদের দখলে নয় শতাংশ এবং কামরুল ইসলামদের দখলে সাত শতাংশ জমি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। দুই পক্ষই জমিটি ভোগ দখল করছে বলে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে বিবাদমান উভয়পক্ষ ওই জমি ভোগদখল করছে দেখেছেন বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও আবুল হোসেন দুই ব্যক্তি।

রাতারাতি জমিতে মাটি ফেলে চালা তৈরি করার প্রসঙ্গে উভয়েই বলেন, “ভালুকায় জোর যার জমি তার-এটি এখানেও প্রমাণিত হয়েছে।”

জমি হারানো রমজান আলী ডিলারের ছেলে শরিফুল ইসলাম বলেন, “গত বৃহস্পতিবার রাতে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই আবুল কাশেম আমাদের জমিতে শতাধিক লোক দা, লাঠি দিয়ে বসিয়ে রেখে ট্রাকে করে মাটি এনে ভরাট শুরু করে।

“আমার মা বাধা দিলে তাকে মারধর করতে থাকে।

“এ সময় আমার ছোট ভাই কামরুল ইসলাম ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ এসে আমার মা এবং ছোট ভাইকে নিয়ে যায়। মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং কামরুলকে থানায় নিয়ে যায় তারা।”

ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রমজান আলী ডিলারের স্ত্রী সখিনা বেগম জানান, মৃত স্বামীর কেনা জমি রক্ষা করতে গিয়ে ট্রাকের সামনে দাঁড়ান তিনি।

“এ সময় মহিউদ্দিন ও কাশেমের লোকজন ছেলেকে আটকে রেখে আমাকে মারধর করে।

“পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে আর ছেলেকে থানায় নিয়ে সারারাত বসিয়ে রাখে। সেই সুযোগে জমিতে মাটি ভরাট করে টিনের দুটি চালা তুলেছে তারা।”

সখিনার ছোট ছেলে কামরুল ইসলাম বলেন, “পুলিশের সহযোগিতার জন্য ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়েছিলাম।

“উল্টো পুলিশ গিয়ে আমাকে থানায় এনে সারারাত বসিয়ে রেখে শুক্রবার বিকালে ছাড়ে। এ সুযোগে কাশেম ও মহিউদ্দিন জমিতে মাটি ভরাট করে টিনের দুইটি চালা তুলে জমি বেদখল করে।”

জমি বেদখলের অভিযোগ ওঠা হাফিজ মহিউদ্দিন বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ নভেম্বর আমার মা রাহাতান নেছা বিবি সাবেক ২৩ নম্বর দাগে ১৬ শতাংশ জমি কেনেন। মা মারা যাওয়ার পরে আমরা ভাই-বোনেরা জমির মালিক হই। এখন জমি আমি আমার দখলে নিয়েছি।

মাটি ভরাট করে জমি বেদখলের সহযোগিতা করার অভিযোগ ওঠা ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আবুল কাশেম বলেন, “মাটি ভরাট হচ্ছে আমার ব্যবসা।

“মহিউদ্দিন বলেছে তার জমিতে মাটি ভরাট করে দিতে তাই আমি দিয়েছি। কারো জমি বেদখল করে দিইনি।”

তবে তার এ কাজের দায় নিতে রাজি হননি তার ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

এর আগেও জমিটি নিয়ে অনেক দফা সালিশে কোন সমাধান না হওয়ার কথা উল্লেখ করে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, “আমার ভাই যদি কোন অন্যায় করে থাকে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।”

‘জমি বেদখলের সময়’ থানায় বসিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে ভালুকা থানার ওসি মাইন উদ্দিন জানান, একই লোকের কাছ থেকে এই জমি প্রথমে হাফিজ মহিউদ্দিনের পরিবার এবং পরে রমজান আলী ডিলারের পরিবার কেনে।

“দীর্ঘদিন জমিটি উভয় পক্ষ ভোগদখল করেছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জমির মালিক মহিউদ্দিন।

“তাই জমিতে মাটি ভরাটের কাজ চললে সেখানে দুর্ঘটনার আশংকায় কামরুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়।”

কামরুল ইসলামকে এভাবে আটকে রাখা প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে আটক করা ‘রংফুল কনসাইনমেন্ট।’

“এটা এক ধরনের ফৌজদারি অপরাধ।”