গাইবান্ধায় স্কুলছাত্র সাম্যকে হত্যার দায়ে ৩ জনের ফাঁসির রায়

গাইবান্ধার আলোচিত স্কুলছাত্র আশিকুর রহমান সাম্যকে অপহরণের পর হত্যা দায়ে তিনজনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2020, 09:29 AM
Updated : 16 Jan 2020, 10:03 AM

এছাড়া আদালত আরও আট আসামিকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে। জরিমানা না দিলে তাদের আরও ছয় মাস কারাগারে থাকতে হবে।

গাইবান্ধার জেলা ও দায়রা জজ দীলিপ কুমার ভৌমিক বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসার জেরে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে সাম্যকে হত্যা করেছে।

২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জেলার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান সরকারের নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে সাম্যকে (১৪) অপহরণের পর হত্যার মামলায় আদালতের এই রায় আসে।

ফাঁসির তিন আসামি হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বর্ধনকুঠি বটতলা এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে শাহারিয়ার সরকার হৃদয়, একই উপজেলার তাগদরিয়া এলাকার শরিফুল ইসলামের ছেলে রকিবুল হাসান সজিব ও একই উপজেলার নাচাই কোচাই এলাকার আহসান হাবীব বকুলের ছেলে মাহমুদুল হাসান জাকির।

কারদণ্ড পাওয়া আট আসামি হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া সেনপাড়ার বেলাল হোসেনরে ছেলে মাসুদ রানা সুজন, একই এলাকার আনারুল ইসলামের ছেলে আলামিন ইসলাম, বর্ধনকুঠি বটতলা এলাকার তাজুল ইসলামের স্ত্রী মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম, বুজরুক বোয়ালিয়া প্রধান পাড়ার আশরাফ আলীর ছেলে মো. আলামিন, বর্ধনকুঠি শিল্পাপাড়া এলাকার হামির উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, হামির উদ্দিনের অপর ছেলে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলি দহপাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে আরেফুর রহমান শিমুল ও শিমুলের স্ত্রী তৌহিদা আক্তার রুনা।

রায় ঘোষণার সময় সব আসামি আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন।

আদালতের পিপি মো. শফিকুল ইসলাম শফিক মামলার নথিল বরাতে বলেন, সাম্যকে ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অপহরণ করা হয়। পরদিন বর্ধনকুঠি বটতলার কমিউনিটি সেন্টারের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় সাম্যর সহপাঠীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন সাম্যর বাবা। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১১ মার্চ সবার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

পিপি শফিকুল বলেন, প্রায় সাড়ে চার বছরের বিচারকাজ শেষে গত ৬ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের দিন ঠিক করে আদালত। এ মামলায় আদালত ১৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। বিচার কার্যক্রম চলেছে গোবিন্দগঞ্জের নিম্ন আদালতে ৪০ দিন ও জেলা জজ আদালতে ১৭ দিন। বিচার শেষে আদালত সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে এই সাজা দিয়েছে।

তবে বাদীপক্ষ রায়ে খুশি হয়নি।

রায় ঘোষণার পর নিহত সাম্যর বাবা গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল, ত্যেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু এই রায়ে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।”

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ প্রধান বলেন, “সাম্য হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছিল গোবিন্দগঞ্জবাসী। দীর্ঘ প্রত্যাশিত রায়ে আমরা হতাশ হয়েছি।”