জামালপুরে সরিষা ক্ষেতে মধুর হাসি

জামালপুরের সাত উপজেলায় দিগন্তজোড়া সরিষা ক্ষেতে এখন হলুদের সমারোহ;আর সেই হলুদ ফুলের রাজ্যে উড়ে উড়ে কৃষকের স্বপ্ন বুনে চলেছে মৌমাছি।

লুৎফর রহমানজামালপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2020, 07:33 AM
Updated : 16 Jan 2020, 07:48 AM

জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলছেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ২০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি জায়গায় ৪ হাজার ১১০টি বাক্স বসিয়ে হচ্ছে মৌ-চাষ।

এবার সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। আর মৌয়ালরা অন্তত ৩৩ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করতে পারবেন বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে।

জামালপুরে সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ-চাষের এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গত কয়েক বছর ধরেই। চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেড় শতাধিক পেশাদার মৌয়াল জামালপুরের সাতটি উপজেলায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন।

ইসলামপুর উপজেলার পলবান্ধা, পাথর্শী, গাইবান্ধা, চরপুটিমারী, চরগোয়ালিনী ও গোয়ালেরচর ইউনিয়নের বেশিরভাগ ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। সেসব মাঠে এখন মৌয়ালদের দারুণ ব্যস্ততা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষে লাভ হয় দুই দিকেই। মৌমাছি সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা করে। ফলে সরিষার উৎপাদন বাড়ে। আবার সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা জমা রাখছে ক্ষেতের পাশের বাক্সের চাকে। তাতে বিপুল পরিমাণ মধু পাওয়া যাচ্ছে।  

এসব উপজেলার মাঠে মাঠে এখন অপরূপ দৃশ্য। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে হলুদ গালিচায়। ক্ষেতের পাশে মৌয়ালদের বসানো বিশেষ বাক্স থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে মৌমাছি। ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুল ফুলে। মধু নিয়ে জমা করছে বাক্সের মৌচাকে।

ইসলামপুরের পাথর্শী ইউনিয়নের দেলিরপাড় গ্রামে কথা হল গাজীপুরের পেশাদার মৌয়াল আজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি এবার দেড়শ বাক্স বসিয়েছেন মধু সংগ্রহের জন্য। এ বছর সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৮ মণ মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

একই চিত্র জেলার দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জ ও সদর উপজেলার সরিষা খেতগুলোতে।

সলামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স দেখভাল করছিলেন টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে আসা মৌয়াল সোহরাব হোসেন।

তিনি বলেন, গত একমাস ধরে ১২০টি বাক্স বসিয়ে তিনি মধু সংগ্রহ করছেন। এবার বেশ ভালো লাভের আশাই তিনি দেখছেন।

জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ‘টরি-৭’ ও ‘বারি ১৪’সহ উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে।

“আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলনও ভাল হয়েছে। বাজার মূল্য ভাল থাকলে চাষিরা এবার ভালো লাভ পাবেন বলে আশা করা যায়।”