থাকা-খাওয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল না এবং ভ্রমণের অনুমতি নিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে তাদের ভাষ্য। তবু প্রতিবছর সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বনকর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছর দুই লাখ ৫১ হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। এই সংখ্যা তার আগের বছরের চেয়ে ৩০ হাজার বেশি।
বন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন দুই লাখ ২১ হাজার ৯৬৯ জন। তার আগের বছর ছিল আরও কম, এক লাখ ৮৩ হাজার ৪৯০ জন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক লাখ ২৮ হাজার ১৭৫ জন আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন এক লাখ ৮১৭ জন।
গত অর্থবছর সুন্দরবন পর্যটন খাত থেকে দুই কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে বলে তিনি জানান।
কিন্তু সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অভিযোগ অনেক।
জেসমিন নাহার নামে একজন পর্যটক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ঢাকায় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সুন্দর ভ্রমণের শখ অনেক দিনের।
বনের অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকার অভিযোগ করেছেন এক ব্যক্তি।
নিজেকে তিনি মুজিবুর রহমান নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি নঁওগায় ধান-চাল কেনাবেচা করেন। সুন্দরবনে প্রবেশের পর তার ব্যবসায়িক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। সুন্দরবন ঘিরে মানুষের রয়েছে অনেক আগ্রহ। পর্যটনশিল্পের বিকাশে সরকারি উদ্যোগ কম। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগেই মানুষ এখানে ঘুরতে আসছে। তবে এখন সুন্দরবন নিরাপদ মনে হয়েছে। আগে যেমন দস্যুদের ভয়ে তটস্থ থাকতে হত।
তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নন ট্রাভেল এজেন্সি এভারগ্রিন ট্যুরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজহারুল ইসলাম কচি।
তিনি বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও নাজুক। প্রতিটি লঞ্চে মাত্র দুইজন করে বনরক্ষী দেওয়া হয়। বনরক্ষীরা বয়স্ক। তাদের অস্ত্র চালানোর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। এ কারণে ঝুঁকি থাকে।
“পর্যটকদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের লঞ্চ বা বোটের মধ্যে রাত কাটাতে হয়। কাঠের তৈরি ওয়াচ টাওয়ারগুলো নড়বড়ে। পর্যটকদের বহনকারী লঞ্চ বেঁধে রাখার মতো ভালো ব্যবস্থা নেই। বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট।”
এসব সমস্যা সমাধান করে সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান।
তিনি বলেন, প্রকল্প পাস হলে নতুন চারটি ইকোপার্ক স্থাপন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণসহ সার্বিক উন্নয়ন করা হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে পর্যটকরা সুবিধা পাবেন।