হাইমচর উপজেলা নির্বাচন: সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।

আল ইমরান শোভন চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2020, 12:33 PM
Updated : 8 Jan 2020, 12:34 PM

মনোনয়নপত্র দাখিলের পর বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো কোনো ভোটারসহ কয়েকজন প্রার্থী উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী প্রশাসন।

আগামী ১৩ জানুয়ারি হাইমচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয়জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী।

চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নুর হোসেন পাটওয়ারী (নৌকা), বিএনপির মো. ইসাহাক খোকন (ধানের শীষ) এবং হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মো. মোতালিব জমাদার (আনারস)।

ইতিমধ্যে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সরজমিন দেখা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুনে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন। ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, হাইমচর একটি চরাঞ্চল এলাকা হওয়ায় এই এলাকার মানুষের জীবনমান কিছুটা অনুন্নত ছিল। তিনি এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।

তাই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই উপজেলার জনগণ আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবে বলে তিনি আশা করছেন।

বিএনপি প্রার্থী ইসহাক খোকন বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি এবং তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।”

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোতালেব জমাদার বলেন, “ইতিমধ্যে আমার নেতা-কর্মী ও আমি হামলার শিকার হয়েছি। আমি নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা করছি। নির্বাচনের লেভেল প্লেইং ফিল্ডের দাবি জানাচ্ছি।”

চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাইমচর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের নেতা-কর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তালিকাভূক্ত অনেক আসামি ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে।

“দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া নির্বাচনে সংঘর্ষে জড়াতে পারে এমন ব্যক্তিদের তালিকা করে তাদের নজরদারীতে রাখা হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।”

হাইমচর থানার ওসি এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর হোসেন ও মোতালেব জমাদার এর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত দশজন আহত হয়।

“এর পরদিন উপজেলার ঈশানবালা চরে আবার দুই গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। এতে দুই পক্ষের আরও ছয় নেতা-কর্মী আহত হন। এ নিয়ে প্রার্থীদের নেতা-কর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে হাইমচর থানায় ৪টি মামলা দায়ের করেছেন।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সাধারণ ভোটার বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা ভীতিকর। তারা সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণের দাবি জানান।

১৩৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাইমচর উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ৮০ হাজার ২৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪১ হাজার ৪১৭ জন এবং নারী ভোটার ৩৮ হাজার ৮১৭ জন। এই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৩১টি কেন্দ্রে ২০০ বুথে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেবেন ভোটাররা।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন খান বলেন, ৩১টি কেন্দ্রের সবগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। ইভিএম পদ্ধতি ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

“ইভিএম এ ভোট প্রয়োগের বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাছাড়া নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দেব না।”

নির্বাচনে তিন প্লাটুন বিজিব, র‌্যাবের ১০টি টিম (প্রতি টিমে আটজন সদস্য), কোস্টগার্ড, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়া চরাঞ্চলের কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে।

ইভিএম মেনিশগুলো অপারেটিং করার জন্য ৩১টি কেন্দ্রে দুইজন করে মোট ৬২ জন সেনাবাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি জানান।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন খান বলেন, প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে হাইমচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।