তীব্র শীতে বোরো বীজতলা হলদে

ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বীজতলা সবুজের বদলে হলদে হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় নীলফামারীর অনেক কৃষক।

বিজয় চক্রবর্তী কাজল নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2020, 05:26 AM
Updated : 8 Jan 2020, 07:29 AM

বোরো মৌসুমের আবাদের জন্য এসব বীজতলা তৈরি করেছেন নীলফামারীর সদরের কৃষকরা।

এ জেলায় কৃষি দপ্তরের এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৬ মেট্রিক টন চাল। ওই পরিমাণ জমি আবাদের জন্য ৪ হাজার ১৫০ হেক্টরের বীজতলার প্রয়োজন হয়।

চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করবেন জেলা সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়নের পাটকামুড়ি গ্রামের কৃষক পরেশ চন্দ্র রায় (৪৫) । এজন্য এক মাস আগে তৈরি করেন তার বীজতলা। সেই বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন বিপাকে পড়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, “টানা শীত আর ঘন কুয়াশায় বিছন মরে যাচ্ছে। যেটুকু আছে তাও হলুদ বর্ণ ধারণ করিছে। এখন ওই পরিমাণ বিছন দিয়ে চার বিঘা জমিতে চারা রোপন সম্ভব হবে না।

তিনি বীজতলা তৈরি করার পর থেকে কুয়াশা পড়া শুরু হয়েছে। সারা রাত পলিথিন দিয়ে ঢেকেও রক্ষার চেষ্টা করছেন। তবে তার বীজতলার অনেক বীজ গজায়নি।

“এখন নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত দামে বিছন সংগ্রহ করির লাগিবে।”

একই অবস্থা জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের শাপলাপাড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলামের। তারও চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য চার কেজি বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা তৈরি করেন। তার বীজতলায়ও হলুদ রঙ ধারণ করে মরে যাচ্ছে চারা।

তিনি বলেন,“এভাবে আর কয়েকদিন চললে পুরোটাই নষ্ট হবে।”

নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে গেলে বোরো আবাদের সময় পেরিয়ে যাবে বললেন তিনি।

সাড়ে ১৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদের জন্য ১৯ কেজি ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন একই ইউনিয়নের বনবিভাগপাড়া গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী (৫০)।

আইয়ুব বলেন, “আমার নষ্ট হওয়ায় ওই বীজতলার চারা দিয়ে অর্ধেক জমিও রোপন সম্ভব হবে না। বিছন কিনে আবাদ করতে উৎপাদ খরচ বাড়বে।”

নিয়ম অনুযায়ী টানা সপ্তাহের বেশি শৈত্যপ্রবাহ হলে বীজতলার ক্ষতি হয়। এবারের শৈতপ্রবাহের স্থায়িত্ব কম হওয়ায় বীজবতলা হলুদ হওয়ায় কৃষকের দুশ্চিন্তাকে আমল দিচ্ছেন না কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা।

একাধিক কৃষকের বীজতলা হলুদ হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) সিরাজুল ইসলাম বলেন,“তেমন ক্ষতি হয়নি।

“বর্তমানে রাতে কুয়াশা থাকলেও দিনে সূর্য তাপ ছড়াছে। কোন বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করলেও সেটি সেরে উঠবে।”

তবে বীজতলা হলুদ হওয়ায় করণীয় সম্পর্কে পরার্শও দেন তিনি।

“শীত থেকে রক্ষার জন্য বীজতলা সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। রাতে মাটির নিচের গরম পানি সেচযন্ত্র দিয়ে তুলে বীজতলায় দিতে হবে।

“কোন বীজতলা হলুদ রঙ ধারণ করলে সেটি সারানোর জন্য প্রতি শতকে সাত গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০ গ্রাম জিপসাম সার দিতে হবে।”