৮৮’র বন্যায় বিধ্বস্ত সেতুটি ৩১ বছরেও পুনঃনির্মাণ হয়নি

গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ‘মানস খালের’ উপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে টলমল করে পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকাবাসী।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2020, 06:00 AM
Updated : 7 Jan 2020, 06:00 AM

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের দিকে সদর উপজেলার কালিরবাজার সংলগ্ন মানস খালের উপর রংপুর জেলা-বোর্ড একটি সেতু নির্মাণ করে। ১৯৮৮ সালের বন্যায় পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয়ে ভেসে যায় ওই সেতু। সরকারিভাবে সেতুটি পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর কাছে ধর্না দিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাই বাধ্য হয়ে চাঁদার টাকায় বাঁশের সাঁকো বানিয়ে ৩১ বছর ধরে চলাচল করছেন তারা।

এ উপজেলার গিদারী ও ঘাগোয়া ইউনিয়নের প্রধানের বাজার, সোনালেরভিটা, খলিসার পডল, বারটিকবী, খরিয়ার চর, ঝাকুয়ারপাড়া, বালিয়ার ছড়া, রহমাননগরের আটটি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এ সাঁকো দিয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করেন।

প্রধানের বাজারের ব্যবসায়ী মফিদুল ইসলাম বলেন, “শুকনো মৌসুমে সাঁকোর নিচ দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করা যায় কিন্তু বর্ষায় সে সুযোগ নেই। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই সাঁকো দিয়েই চলাচল করতে হয় তখন।”

কালিরবাজারের ব্যবসায়ী মো.হাশেম মিয়া বলেন,“প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা এলে তাদের কাছে সেতুটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানায়েছি আমরা।

“কিন্তু ১৯৮৮ সালের পর সেতুটি পুনঃনির্মাণের আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

ওই এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, “সাঁকোটির মাঝখানে ভেঙে যাওয়ায় এখন বেশি খরচ করে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে দারিয়াপুর হয়ে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে।”

এলজিইডিকে বারবার সাঁকোটি নতুন করে নির্মাণ জরুরি জানালেও কোন কাজ হয়নি বলছেন তিনি।

গিদারী ইউনিয়নের খরিয়ার চর এলাকার স্কুলশিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, “সেতুটি বিধ্বস্ত হয়ে ভেসে যাওয়ার পর স্থানীয়রা একটি সেতু নির্মাণের জন্য অনেক দপ্তর ও জনপ্রতিনিধির কাছে আবেদন নিবেদন করেও কোন দপ্তরকেই নাড়া দিতে পারেনি।

“তাই এলাকার লোকজন ১৯৮৯ সালে সেখানে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। এরপর থেকে সাঁকো ক্ষতিগ্রস্ত হলে এলাকাবাসীই তা মেরামত করে আসছেন।”

এ সাঁকোর মাঝখানে বাঁশের মাচা ভেঙে যাওয়ার কথা তুলে তিনিও বললেন, “বর্তমানে যানবাহন দূরের কথা লোক চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ।”

একই অভিযোগ গিদারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ইদু মিয়ারও।

বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সদর উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এলজিইডির গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসনকে এলাকার জনগণের দুর্ভোগের বিষয়টি অবহিত করে সেতু নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

চেয়ারম্যান হারুনুর বলেন, “তারপরও দীর্ঘদিনেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি।”

১৯৭৩ সালের দিকে আট লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ‘৮৮ সালের বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সেই সেতুর অস্তিত্ত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

ওই সাঁকোর জায়গায় ৪৫ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

“অনুমোদন পেলে দ্রুত সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।”