কেরানীগঞ্জের সেই রাসায়নিকের গুদামের অনুমোদন নেই

ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড হওয়া রাসায়নিকের গুদামের কোনো অনুমোদন ছিল না বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2020, 02:42 PM
Updated : 5 Jan 2020, 06:08 PM

পূর্ববন্দ ডাকপাড়া এলাকায় রোববার দুপুরে এই রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আগুন নেভানো হয়েছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এ ঘটনা তদন্তে উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস দুটি কমিটি গঠন করেছে।  

প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মাস না পেরোতেই কেরানীগঞ্জে ফের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র অফিসার সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় চল্লিশ মিনিট চেষ্টার পর আগুন সম্পূর্ণ নেভাতে সক্ষম হয়। আগুনে কেউ হতাহত হয়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

এছাড়াও গুদামে কর্মরত বা মালিকপক্ষের কাউকে না পাওয়ায় গুদামের নামও জানা যায়নি বলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা জানান।

গুদামের আশপাশের বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, প্রায় ৭/৮ বছর আগে এখানে নিজস্ব জমিতে আধা পাকা ভবনে তিনটি রাসায়নিক গুদাম স্থাপন করেন পুরান ঢাকার মারুফ নামে এক ব্যক্তি।

গুদামে বিস্ফোরণ হলে আশেপাশের ঘরবাড়িগুলো ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। কয়েকটি ঘরের জানালার কাচ ও আসবাবপত্র ভেঙে পড়ে। চারদিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। 

এ সময় বাড়ির আশপাশের লোকজন চিৎকার শুরু করে। পরে সংবাদ পেয়ে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. মইনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকনজে বলেন, “আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি রাসায়নিক গুদামের মালিক পুরান ঢাকার মারুফ হোসেন। কয়েক বছর যাবৎ তিনি নিজস্ব জায়গায় তিন রুম বিশিষ্ট্য টিনশেড ঘর তুলে সেখানে রাসায়নিক দ্রব্য মজুদ করে রেখেছিলেন। বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর আমরা পাইনি।” 

ওসি জানান, এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন সাত সদস্যবিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি, ফায়ার সার্ভিস চার সদস্যবিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

“এছাড়াও বিস্ফারক অধিদপ্তরের একটি টিম ও সিআইডির একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মোস্তফা মোহসীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গোডাউনটিতে সোডিয়াম থায়ো, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট মনোহাইড্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ছিল।

“ধারণা করা হচ্ছে সোডিয়াম থায়ো থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে।”

এখানে এই গুদামটির কোনো অনুমোদন ছিল না বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত দেবনাথ বলেন, কিছুদিন আগে কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অনেক মানুষ মারা গেছে। এরপর থেকেই তারা অবৈধ কারাখানার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কারখানা ঝূঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

এই গুদামের কোনো অনুমোদন ছিল না বলেও জানান ইউএনও।

তিনি আরও জানান, এর আগে প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর এ পর্যন্ত অন্তত ২৪টি কারখানা সিলগালা করা হয়েছে।

ইউএনও জানান, বিস্ফোরণের বিষয়ে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুল হাসান সোহেলকে আহ্বায়ক ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, “আমি ইতিমধ্যে কেরানীগঞ্জের সব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করেছি। অবৈধ কারখানা ও গুদামের তালিকা করে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।”