লোকবল সংকটে ফরিদপুর আবহাওয়া অফিস

৩৮ বছরের পুরানো লোকবল সংকটে থাকা ফরিদপুরের আবহাওয়া অফিসকে কৃষিকাজের সহায়ক হিসেবে গড়ার দাবি উঠেছে।

শেখ মফিজুর রহমান শিপন ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2020, 07:45 AM
Updated : 5 Jan 2020, 07:45 AM

এ দপ্তরে তিন জন সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার (জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক) থাকার কথা থাকলেও পদগুলো শূন্য পড়ে রয়েছে।

বেলুন মেকার থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পর্যবেক্ষক সামলাচ্ছেন এ অফিসের আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের কাজ।

এক সময় এ বিভাগ ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাথে একই ভবনে ছিল। ১৯৮১ সালে এক একর ৫৪ শতাংশ জায়গায় নিয়ে শহরের চানমারি এলাকায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ ফরিদপুরে আবহাওয়া অফিসের নিজস্ব কার্যালয় নির্মাণ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরে পদ রয়েছে সাতটি। এরমধ্যে তিনটি সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার (জেষ্ঠ্য আবহাওয়া পর্যবেক্ষক) এবং একটি আবহাওয়া সহকারী, তিনটি বেলুন মেকার।

এরমধ্যে বর্তমানে আবহাওয়া সহকারী একজন, বেলুন মেকার দুই জন এবং পর্যবেক্ষক দুইজন কর্মরত রয়েছে।

ফরিদপুর আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবহাওয়া সহকারী সুরজুল আমীন বলেন, এ অফিসে বর্তমানে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে তার মধ্যে বায়ুর চাপ পরিমাপের জন্য ব্যারোমিটার, কতক্ষণ সূর্য ছিল সেটি জানার জন্য সানশাইন রেকর্ডার, সূর্যের তীব্রতা মাপার জন্য পায়রনোগ্রাফ, শিশির পরিমাপের জন্য ডিউব্যালেন্স, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মোমিটার, উইন্ডশিল্ড পরিমাপের জন্য কাপ এনোমিউমিটার, বাতাসের দিক নির্ণয়ের জন্য উইন্ড ব্যান্ড, বৃষ্টির পরিমাপের জন্য সেলফ রেকর্ডিং রেইনগেজসহ আরো কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে।

এখানকার জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও আবহাওয়ার সূচক সংগ্রহে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো পুরানো হওয়ায় মাঝেমাঝেই অকেজো হয়ে পড়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অচল হয়ে পড়া বেশ কিছু যন্ত্রপাতি মেরামত করে সচল করা হয়েছে।

কৃষির জন্য মাটি ও পানির তাপমাত্রাসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি জানার অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন রয়েছে ফরিদপুরের এ আবহাওয়া দপ্তরে। উপজেলাতেও এ অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

তবে দিনরাত আবহাওয়ার তথ্যসহ মাটি ও পানির তাপমাত্রা জানার ব্যবস্থা থাকলেও মেঘের স্তরের (ক্লাউড লেয়ার) নিচের জলবায়ুর তথ্য জানার কাজ এখানে হয় না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ক্লাউড লেয়ারের নিচের এসব তথ্য জানতে কয়েক হাজার মিটার উচ্চতায় বৃহদাকারের বেলুন ওড়াতে হয়। দেশের বিভাগীয় আবহাওয়া দপ্তরগুলোয় এ বেলুন উড়ানো হলেও ফরিদপুরে এখনো এ বেলুন ওড়ানো হয়নি জানান ওই কর্মকর্তা।

তবে কৃষিভিত্তিক ফরিদপুর অঞ্চলে এ বেলুন ওড়ানো জরুরি মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কর্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল কৃষি নির্ভর হওয়ায় কৃষি বিষয়ক আবহাওয়ার তথ্য জানার দরকার।

তিনি বলেন, মাটি ও পানির তাপমাত্রার পরিমাপ জানা গেলেও মেঘের স্তরের নিচের জলবায়ুর তথ্য জানার জন্য ফরিদপুর আবহাওয়া অফিস থেকে বেলুন উড়েনির ব্যবস্থা থাকলে ভালো হত।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়া সহকারী সুরজুল আমীন বলেন, জেলা পর্যায়ের এ দপ্তর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয় না।

“আমরা প্রতিদিন দুইবার আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাই।”

জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, যন্ত্রপাতি আধুনিক হলে অবশ্যই প্রাপ্ত তথ্যও নিখুঁত হবে।

এ আবহাওয়া দপ্তরের আধুনিকায়নের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, এরইমধ্যে  এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ জনপদের মানুষ কৃষিকাজের উপযোগী ও ক্ষতিকর জরুরি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য দ্রুত পাওয়া জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।