বান্দরবানে ৮ মাস পরে বৌদ্ধ ভিক্ষুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

মৃত্যুর আট মাস পরে নৃত্য-সংগীতের মধ্য দিয়ে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে বান্দরবানে।

উসিথোয়াই মারমা বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2020, 03:08 PM
Updated : 3 Jan 2020, 03:10 PM

জেলা শহরের উজানীপাড়ায় বৌদ্ধ বিহারে শুক্রবার বিকালে উচাইন্দাওয়ারা মহাথের নামে এই ভিক্ষুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়।

বিহার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংথোয়াইচিং মারমা বলেন, “গত বছর এপ্রিলে উচাইন্দাওয়ারা ভিক্ষু ৬৪ বছর বয়সে পরলোগমন করেন। বৌদ্ধ রীতি অনুসারে ভিক্ষুর মৃতদেহ বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

“ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে বিহার প্রাঙ্গণে ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতায় বারুদগোলা ডুংসিং প্রক্ষেপণের মাধ্যমে মরদেহ দাহ করেন শত শত ভক্ত ও দায়ক-দায়িকারা।”
মংথোয়াইচিং বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া এই বৌদ্ধ ভিক্ষু ছেলেবেলায়ই শ্রমণ জীবন বেছে নেন। এরপর ভিক্ষু জীবনধারণ করেন। বৌদ্ধ ধর্মরীতি অনুসারে তিনি ৪২টি বর্ষাবাস করেন। এ কারণে জেলায় একজন বিশিষ্ট ও জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু ছিলেন তিনি।”
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সবার শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিহার থেকে মৃতদেহ বের করে রাখা হয় বিশেষ আদলে তৈরির মঞ্চে। এ সময় ধর্মীয় প্রার্থনা পরিচালনা করেন বর্তমান বিহারাধ্যক্ষ শুভলঙ্কার মহাথের। প্রার্থনা শেষে শ্রদ্ধা জানান পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, বোমাং সার্কেলের প্রধান রাজা উচপ্রু চৌধুরী ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা। তারপর মোম ও আগর জ্বালিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভক্তরা।
একই সঙ্গে বিহার প্রাঙ্গণ ও তার পাশের ডন বস্কো উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয় বিভিন্ন জায়গা থেকে অংশ নিতে আসা ভক্তদের নৃত্য। ভিক্ষুর স্মরণে ধর্মীয় গান গেয়ে বিভিন্ন সুর ও ছন্দে নৃত্য পরিবেশন করে ৫৮টি দল।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আবার নৃত্য পরিবেশন করা হয়। পরে একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভিক্ষু সংঘ ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যক্তিরাও।

সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের থোয়াইংগ্য পাড়া থেকে আসা গানের দলের প্রধান মংবা এ মারমা বলেন, যেকোনো জায়গায় ভিক্ষুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হলে তারা অংশ নিয়ে থাকেন। এর জন্য ১০ দিন ধরে প্রস্তুতি নেন তারা।

মংথোয়াইচিং বলেন, অনুষ্ঠানে মেয়েদের প্রায় ২০টির মত দল অংশ নিয়েছে।

মেয়েদের একটি দলের প্রধান ছিলেন অংমেচিং মারমা।

“এ জন্য আমাদের মাসব্যাপী এই নৃত্য চর্চা করতে হয়েছে। এই নৃত্যে অংশ নিলে একদিকে পুণ্য হয়, অন্যদিকে ভিক্ষুকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ জন্য কঠোর অনুশীলন ও অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।”

এ বিষয়ে মারমা ভাষার লেখক ও গবেষক মংক্যশোয়েনু নেভি বলেন, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও যেকোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির স্মরণে এই নৃত্য আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সুর ও ছন্দে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে ব্যক্তির কর্ম ও জীবনকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।”

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকার ৩১৫ জন বৌদ্ধ ভিক্ষু, ৭৫ জন শ্রমণ, হাজারো ভক্ত ও দায়ক-দায়িকা অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিহার কমিটি।