এ ঘটনায় উপজেলার বড় বিহানালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মজিদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে মজিদের ভাই করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বাগমারা থানার পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান।
মৃত আক্তারুন নেছা (৪২) বড় বিহানালী ইউনিয়নের বাগান্না গ্রামের এনায়েত আলীর মেয়ে। তার স্বামীর বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার পুড়াদহ এলাকায়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার ময়নাতদন্ত হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
পরিদর্শক মিজানুর বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার পর ১৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে আক্তারুন বাবার বাড়িতে থাকতেন। আবদুল মজিদের ফসল নষ্ট হওয়ার করার অভিযোগে আক্তারুনকে তুলে নিয়ে গিয়েগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করে বলে তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ করেছেন।
“বুধবার সকালে আক্তারুন কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন।এছাড়া আক্তারুনের সঙ্গে মজিদের অর্থ লেনদেন নিয়ে বিরোধ ছিল।”
এ ঘটনায় নিহতের নারীর ভাই সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে আবদুল মজিদসহ ছয়জনকে আসামি করে থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন বলে জানান মিজানুর।
ঘটনার বর্ণনায় স্থানীয়রা জানান, আক্তারুনের সঙ্গে মজিদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফসল নষ্ট করা অভিযোগে আক্তারুনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে রশি দিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়।
খবর পেয়ে রাতেই স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মিলন গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে আক্তারুনকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
আক্তারুনের ভাই সাইফুল সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার বোন স্থানীয় বাঘাবাড়ি বাজারের একটি দোকান থেকে কীটনাশক কিনে এনে পান করে।
“এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।”
সাইফুল বলেন, “গত ইউপি নির্বাচনের সময় মজিদ তার বোনের কাছে এক লাখ টাকা ধার নেয়। কিন্তু সে টাকা ফেরত দিচ্ছিল না। টাকা উদ্ধারের জন্য ১০/১১ মাস আগে তার বোন মজিদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
“কিন্তু মামলা করেও টাকা ফেরত পায়নি। তবে মামলার করার পর থেকে তাদের মধ্যে বিরোধ বেড়ে যায়।”
এর জেরে তার বোনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এই ক্ষোভ ও লজ্জায় তার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে সাইফুলের অভিযোগ।
নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, “ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে আক্তারুন এক সপ্তাহ ধরে তার খেতের পেঁয়াজ ও আলু নষ্ট করে আসছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতেও তিনি ফসল নষ্ট করেছেন।
“খবর পেয়ে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে খেতের পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পরে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়।
ওই নারীর সঙ্গে অর্থ লেনদেন ও মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে বলে স্বীকার করলেও নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বিহানালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মিলন বলেন, “আমি এলাকার বাইরে থাকার কারণে ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে খবর পেয়ে ফোন করে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে নারীটিকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
“বুধবার দুই পক্ষকে নিয়ে বসে একটি সমাধানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই নারীটি ক্ষোভে আত্মহত্যা করে।”