চার হাত-পা নাই লিতুনের, পেয়েছে জিপিএ ৫

চার হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া লিতুন জিরা নামের এক মেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2019, 04:00 PM
Updated : 31 Dec 2019, 04:42 PM

মঙ্গলবার সারাদেশের প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগমের মেয়ে লিতুন এই ফল অর্জন করে।

লিতুনের কনুই পর্যন্ত হাত আর হাটু অবদি দুই পা তার। এ প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। থুতনিতে কলম চেপে ধরে লেখায় পারদর্শী যশোরের খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ ছাত্রী।

এ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ায় খুশি তার শিক্ষকরাও।

খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন বলেন, “২৯ বছর শিক্ষকতা জীবনে লিতুন জিরার মতো মেধাবী শিক্ষার্থী পাইনি।

“শুধু লেখা-পড়ায় না, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অন্যদের থেকে অনেক ভালো সে।”

হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া লিতুন ‘প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর মেধার জোরে’ থুতনি দিয়ে কলম চেপে ধরে লেখে সে বলে জানান তিনি।

লিতুনের বাবা হাবিবুর ও মা জাহানারা জানান, জন্মের পর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন তারা। এখন মেয়ের মেধা তাদের আশার সঞ্চার হয়েছে।

ওর মা বলেন, “লিতুন জিরা আর দশটা শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া-দাওয়াসহ সব কিছু করতে পারে। মুখ দিয়েই লিখে সে। তার চমৎকার লেখা যে কারো দৃষ্টি কাড়বে।

“লিতুনের একটাই ইচ্ছা-পরনির্ভরশীল না হয়ে লেখাপড়া শিখে নিজেই কিছু করতে চায় সে।“

লিতুনের বাবা কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহী লিতুন হুইল চেয়ারে করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। একমাত্র চলাচলের বাহন হুইল চেয়ারটি এক পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ে লিতুনের যাওয়া-আসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

১৭ বছর ধরে কলেজে চাকরি করলেও তার কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় অনটনে কাটে কাটে তাদের সংসার। এ কারণে মেয়ের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খান বলে জানান হাবিবুর রহমান।