ঠাণ্ডায় কষ্টে ঠাকুরগাঁওয়ের খেটে খাওয়া মানুষ

ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে; ভোগান্তি বেড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিমো. শাকিল আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 01:39 PM
Updated : 30 Dec 2019, 01:57 PM

সোমবার সকাল ১০টার দিকে সূর্যের দেখা মিলেছে। গত কয়েকদিন ধরে সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনভর থাকছে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। রাস্তায় মানুষজন কম। দিনের বেলায়ও সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। রাতে-দিনে শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে তাপ পোহাচ্ছেন অনেকে।

জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দৈনিক তাপমাত্রাসহ নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আফতাব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার শীতের তীব্রতা অনেক বেড়েছে; আরও বাড়তে পারে। সপ্তাহখানেক ধরে সূর্যের দেখা মেলানি। কনকনে শীতের কারণে মাঠে কাজ করতে পারছে না কৃষকরা।  

তিনি জানান, সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রোববার ৯ ডিগ্রি, শনিবার ৮ ডিগ্রি, শুক্রবার ৮ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার ৯ ডিগ্রি, বুধবার ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

শীতের অব্যাহত তীব্রতার কারণে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা থমকে গেছে। কাজকর্মের গতি কমে যাওয়ায় অনেকের রোজগার কমে গেছে। প্রতিদিন সবাই কাজ পাচ্ছে না।

জেলা শহরের খালপাড়ার রিকশাচালক আতাউর রহমান বলেন, “আগে ভোর বেলা রিকশা নিয়ে বের হতাম। এখন শীতের কারণে ভোরে রিকশা বের করতে পারি না। এছাড়া রিকশায় ঠাণ্ডা বেশি লাগায় যাত্রীও কম পাওয়া যায়। তাই আয়-রোজগারও কমে গেছে।”

সদরের রাজাগাঁও ইউনিয়নের খড়িবাড়ি গ্রাম থেকে আসা শহরের চৌরাস্তায় কাজের অপেক্ষায় থাকা দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, “শীত বাড়ার কারণে মানুষ কাজে লোক কম নিচ্ছে। তিনদিন ধরে কোনো কাজ পাইনি। অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি।” 

শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার ট্রাক চালক সোহেল রানা বলেন, এবার ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি; সাথে ঠাণ্ডা হাওয়া। ঘন কুয়াশা থাকার কারণে দিনের বেলায় হেটলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। শীতে গাড়ি চালানো কষ্টকর।

সদর উপজেলার নারগুরের কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন, “ধার দেনা করে ২০ কাঠা জমিত কালাই আবাদ করিছু। কালাই তুলিবার সময়ও হইছে। কিন্তু হাড়কাঁপা ঠাণ্ডার তানে কালাইলা তুলিবা পারু না।”

শহরের খালপাড়ার আরেক বাসিন্দা আজিম উদ্দীন বলেন, ৪/৫ দিন ধরে শীত ও হিমেল হাওয়ার তীব্রতা বেড়ে গেছে। ঠাণ্ডার কারণে তিনি সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।  

শহরের হাজীপাড়ার মহসীনা বেগমসহ অনেকেই বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। সারাদিন ও রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আর বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

৭০ বছরের আব্দুল আজিজ বলেন, অনেক ঠাণ্ডা। শীতে থরথর করে কাঁপছে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষজন। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। গরীব যারা তারা তো শীতের কাপড়ই পায় না।

এদিকে, সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাহান নেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শীতজনিত শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে।

“গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ১৫ জন শিশু ভর্তি হয়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে ১৮৯ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।”

শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসক শাহজাহান নেওয়াজ।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখানে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি; ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নেমে যায়।

“সরকার থেকে ৪০ হাজার কম্বল পেয়েছিলাম; এগুলো উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।”

আরও ৫০ হাজার কম্বলের চাহিদার কথা জানিয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে; তা পেলেই শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।