সারা দেশে পালিত হচ্ছে বড়দিন

যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় সারা দেশে বড়দিন উদযাপন করছেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা। 

জেলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2019, 11:07 AM
Updated : 25 Dec 2019, 11:12 AM

দিবসটি পালনোপলক্ষে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোসহ গির্জায় গির্জায় ফুলের সাজসজ্জা, আলোকমালাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও।

বানানো হয় যীশুখ্রিষ্টের জন্মের ঘটনার প্রতীক গোশালা। আর বড়দিনের কেক তো আছেই।

কোনো কোনো স্থানে মেলারও আয়োজন করা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ শহরের কৃষ্টপুরে ময়মনসিংহ ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশ সাধু পেট্রিকের কাথিড্রাল গির্জায় সকাল ৯টা থেকে সব বয়সের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা একত্রিত হতে থাকে। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশেষ প্রার্থনা শুরু হয়ে চলে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।

সাধু পেট্রিকের ক্যাথিড্রালে বড়দিনের প্রার্থনা করান বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রধান ধর্মপাল পল পনেন কুবি।

ছবি: ময়মনসিংহ

প্রার্থনায় বিশ্ব মানবজাতির শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস জঙ্গিবাদমুক্ত ও সমৃদ্ধিশীল দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

প্রার্থনা অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকরাও অংশগ্রহণ করেন।

শহরের অন্যান্য গির্জাগুলিতেও নানা আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। শহরের খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকায় রঙিন বাতিসহ বিভিন্ন ধরনরে সাজে সজ্জিত করা হয়।

এ উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন উপসানালয়, গির্জা, কবরস্থান এবং বড় দিন উদযাপন অনুষ্ঠানের স্থানগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

ছবি: ময়মনসিংহ

প্রার্থনা অনুষ্ঠানে আসা মিতালী সাহা ও রানী দত্ত বলেন, সারা বছর যেন সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন এই প্রার্থনা করবেন ঈশ্বরের কাছে। তাছাড়া সারাদিন প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা জানানো, ভাল খাওয়া-দাওয়া ও ঘোরাঘুরি করে সময় কাটাবেন। বছরের প্রতিটিদিন তারা প্রিয়জনদের সঙ্গে ভালোভাবে কাটানোর প্রত্যাশা করেন।

বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রধান ধর্মপাল পল পনেন কুবি বলেন, প্রায় ২ হাজার বছর আগে মানুষের কল্যাণের জন্যই মানুষ রুপে জন্ম নেন যিশুখ্রিষ্ট। এ জগতে মানুষের হানাহানি মারামারি ও অশান্তি দূর করার জন্যই  যীশুখ্রিস্টের জন্ম হয়। তাকে অনুসরণ করেই আমাদের আগামীর পথ চলা।

বেনাপোল

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার জগনন্দকাঠি বাকুড়া গ্রামের গির্জায় বুধবার সকালে বিশেষ প্রার্থনা, ধর্মীয় আলোচনাসহ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় খ্রিষ্ট ধর্মবলম্বীদের ৩০টি পরিবারের প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

ছবি: বেনাপোল

বুধবার সকালে ঝিকরগাছা উপজেলার জগনন্দকাঠি বাকুড়া গ্রামের গির্জায় আলোচনায় অংশ নেন ফাদার ডোমেনিক সরকার।

আলোচনা শেষে দেশ ও জাতীর মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায়ও অংশ নেন ফাদার ডোমেনিক সরকার।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রদীপ সরকার, প্রতাপ সরকার, রনজিৎ সরকার, পরিতোষ মালি প্রমুখ।

বক্তারা যীশুখ্রিষ্টের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। পরে আগত ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

ছবি: বেনাপোল

প্রতাপ সরকার জানান, ১৮৫৫ সালে জগনন্দকাঠি বাকুড়া গ্রামের গির্জাটি প্রতিষ্ঠা করেন ফাদার আন্তনিও মারিয়েন্তি পিমে। 

শার্শার উলাশী, ঝিকরগাছার নোয়াপাড়া ও শিমুলিয়া গির্জায়ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

উলাশীর গির্জায় শার্শার সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন উপস্থিত হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময় করেছেন।

শেরপুর

বড়দিন উদযাপনে শেরপুরের বিভিন্ন খ্রিষ্টান মিশন ও ধর্মীয় উপাসানালয়ে দিনব্যাপী নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।  

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৯টি গির্জায় প্রায় বিশ হাজার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী নানা আয়োজনে বড়দিন উদযাপন করে।

ছবি: শেরপুর

সরেজমিনে কয়েকটি গির্জায় গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে কেক কাটা, যিশুর জন্মস্থান প্রতীকী গোয়াল ঘর তৈরি করে আরাধনা, কীর্ত্তন, ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত খাওয়া, প্রীতি ভোজ এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়।

বড়দিন উপলক্ষে জেলার বাইরে কর্মস্থলে থাকা লোকজন স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হতে বাড়ি ফিরেছেন।

ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দিনব্যাপী বিভিন্ন গির্জার পাশে আদিবাসী পণ্যের মেলাও বসানো হয়েছে।

ছবি: ময়মনসিংহ

এদিকে জেলার এসব ধর্মপল্লীতে যেন নির্বিঘ্নে খ্রিষ্টানরা উৎসব করতে পারে সেজন্য জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, জেলার ধর্মপল্লীতে যেন নির্বিঘ্নে খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মীয় উৎসব করতে পরে সেজন্য পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।