গাইবান্ধার সেই সাঁওতাল হত্যার তদন্তে এবার সিআইডি

গাইবান্ধায় চিনিকল থেকে জমি উদ্ধারে নামা তিন সাঁওতাল হত্যা মামলার তদন্ত ভার এবার সিআইডিকে দিয়েছে আদালত।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2019, 01:26 PM
Updated : 23 Dec 2019, 01:26 PM

সোমবার বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র এ নির্দেশ দেন বলে বাদী পক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম ও মুরাদজ্জামান জানিয়েছেন।

এর আগে গত ৪ নভেম্বর এ মামলায় পিবিআই এর দেওয়া অভিযোগপত্রে উপর মামলার বাদী থোমাস হেমব্রমের নারাজির আবেদনের উপর শুনানি হয় আদালতে। শুনানি শেষে নাজারি মঞ্জুর করে আদালত।

আদেশের পর বাদীর আইনজীবীরা জানান, সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ায় তারা খুশি।

১৯৬২ সালে সাঁওতাল ও বাঙালিদের এক হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ।

পরে ২০১৫ সালে ধান-পাটসহ অন্যান্য ফসল চাষে ওইসব জমি লিজ দিলে অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে পূর্বপুরুষের জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করে সাঁওতালসহ ওই বাঙালিদের গোষ্ঠী। এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই খামারের কিছু এলাকায় তারা চারটি বসতি স্থাপন করে।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ চিনিকলের ইক্ষু খামারে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন সাঁওতাল নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়।

সাঁওতালদের পক্ষে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কয়েকশ’ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

পরে হাইকোর্টের নির্দেশে গাইবান্ধার পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে গত ২৩ জুলাই শাকিল আহম্মেদসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তবে মামলার বাদী থোমাস হেমব্রম পিবিআই এর এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির আবেদন করেন।

তিনবছর আগে পুলিশ ও চিনিকল কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সেই ঘটনা স্মরণ করে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাক্সে বলেন, সাঁওতালদের ঘরে হামলা, লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং বর্বরোচিতভাবে গুলিবর্ষণের ঘটনায় শ্যামল হেমরম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নিহত হয়। অনেকেই গুরুতর আহত হয়।

সাঁওতালদের করা মামলার মূল আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর গুরুক্তপুর্ণ আসামিদের নাম বাদ দিয়ে গত ২৩ জুলাই আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোর ঘটনায় দুইজন পুলিশ সদস্য ও এক ডিবি সদস্য সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার কথা দাবি করে তিনি জানান, ওই অগ্নিসংযোগ ঘটনায় জড়িত তিনজন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে তাদের ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করে পুলিশ প্রশাসন।

“মামলাটির আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তকালে পিবিআই ওই পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনেনি।”

এদিকে নারাজির আবেদন মঞ্জুর হবার খবর শুনে সাঁওতালরা আদালত সংলগ্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তারা মিছিলে অন্যান্য দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য স্লোগান দেন।