রাজশাহীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা এমপি বাদশার

রাজশাহী নগরীর গাঙপাড়ায় বারাহী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান ঠেকিয়ে দিয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2019, 05:39 PM
Updated : 22 Dec 2019, 06:33 PM

রোববার দুপুর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রায় চারঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে তিনি উচ্ছেদ অভিযান চালাতে দেননি। ফলে অভিযান স্থগিত করে চলে যান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা।

ফজলে হোসেন বাদশার দাবি, এই প্রচণ্ড শীতে মানবিক কারণে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পাউবো ও খাস জমি সঠিকভাবে পরিমাপের পর উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়ারও দাবি করেন এই সাংসদ।

এদিকে, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ওই এলাকায় অবস্থানকালে তাকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে বোয়ালিয়া মডেল থানায় জিডি করেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনির উদ্দিন পান্না।

পাউবো রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম বলেন, আগের ঘোষণা অনুযায়ী পাউবোর কর্মকর্তারা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আইনশৃখলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। এতে নেতৃত্বে ছিলেন ইমরুল কায়েস এবং আবুল হায়াত নামের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর এমপি বাদশা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করেন।

তিনি বলেন, গাঙ্গপাড়া খাল প্রশস্তকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেখানে পাউবোর জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

“তবে সাংসদ বাদশার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পাউবোর জমি সঠিকভাবে মাপের পর সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাব। এছাড়া পাশেই কিছু খাস জমি রয়েছে। সেখানে উচ্ছেদকারীদের পুনর্বাসন করা হবে।”

নগরীর বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমরুল কায়েস বলেন, দখলদাররা সবাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে আছেন। সারাদেশেই খাল পুনর্খনন কর্মসূচি চলছে। তারই অংশ হিসেবে এখানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। তাদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে মাইকিংও করা হয়। এরপর রোববার সকাল থেকে অভিযান শুরু হয়। পরে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা এসে অভিযানে বাধা দেন।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “যাদের বাড়িঘর উচ্ছেদ করা হচ্ছে তাদের নোটিশ দেওয়া হয়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদের নোটিশ দেখাতে পারেননি। আইন লঙ্ঘন করে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছেন। তাই আমরা প্রতিরোধ করেছি।

“এখানে উচ্ছেদ করতে হলে আগে জরিপ করা হোক। শহরে বড় বড় প্রভাবশালীরা নদী দখল করে বড় বড় ভবন করেছে। আগে তাদের উচ্ছেদ করা হোক। এই তীব্র শীতে এরা কোথায় যাবে? মানবিক কারণেই বাধা দিয়েছি।”

সেখানে বাদশার সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি প্রমুখ।

১৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকে এ এলাকায় প্রায় ২৫০টি পরিবার বসবাস করছে। প্রতিটি বাড়ির হোল্ডিং নম্বর রয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগও রয়েছে। এছাড়া তারা সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত রাজস্ব প্রদান করে।

“প্রায় তিন হাজার মানুষ সেখানে বসবাস করে। সেখানে ৫০ এর বেশি এসএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছে। এ অবস্থায় উচ্ছেদ অত্যন্ত অমানবিক। তাই সাংসদ বাদশাসহ আমরা উচ্ছেদ অভিযান প্রতিরোধ করতে বাধ্য হয়েছি।”

এদিকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় এমপি বাদশার পক্ষে দায়ের করা জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এলাকাবাসীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অবস্থানের সময় দুপুর সোয়া ১টার দিকে মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তি ০১৯৩৯৪৭২৮৫১ ফোন নম্বর থেকে ফোন দিয়ে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন।

বাদশাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয় বলে জিডিতে অভিযোগ করা হয়।

ক্ষমতাসীন জোটের শরীক সংগঠন সাম্যবাদী দলের মহানগর শাখার সাবেক সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে এমপি বাদশাকে ফোন দিয়ে রাজশাহীর স্বার্থে নদী দখলদারদের পক্ষে অবস্থান না নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় এবং সেখান থেকে চলে যেতে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল।

“এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে আমার মরহুম মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে তুলে গালাগালি করেন। আমি তার প্রতিবাদ করলে তিনি (বাদশা) আমার হাত-পা কেটে নেওয়ার হুমকি দেন, যা ফোনে রেকর্ড রয়েছে।”

এরপর ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবুও তাকে ফোন করে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন মাসুদ রানা।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, সাংসদ বাদশার পক্ষে একটি জিডি গ্রহণ গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।