গাইবান্ধায় সাঁওতাল হত্যার হোতাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীতে হামলায় তিনজন নিহত ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং জমি ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2019, 05:35 PM
Updated : 21 Dec 2019, 05:35 PM

শনিবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের কাটামোড়ে এ মানববন্ধনে ‘সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটি’ ও ‘আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ’ এর নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন।

২০১৬ সালে সাঁওতাল হত্যার ঘটনায় করা মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র প্রত্যাখান করে দেওয়ার নারাজি পিটিশনের উপর আদালতের আদেশের দিন রয়েছে আগামী ২৩ ডিসেম্বর।

একে সামনে রেখে শনিবারের বিক্ষোভ থেকে বক্তারা সাঁওতাল হত্যা মামলার ঘটনায় জড়িত মূল আসামিদের বাদ দিয়ে গাইবান্ধা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া চার্জশিট প্রত্যাহারের দাবি জানান।

একই সাথে সাওঁতালদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ক্ষতিপূরণসহ বাপ-দাদার জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান তারা।

সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে  এ সভায় আরো বক্তব্য দেন, সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, কোষাধ্যক্ষ সুফল হেমব্রম, সাঁওতাল হত্যা মামলার বাদী থমাস হেমব্রম প্রমুখ।

১৯৬২ সালে সাঁওতাল ও বাঙালিদের এক হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ।

পরে ২০১৫ সালে ধান-পাটসহ অন্যান্য ফসল চাষে ওইসব জমি লিজ দিলে অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে পূর্বপুরুষের জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করে সাঁওতালসহ ওই বাঙালিদের গোষ্ঠী। এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই খামারের কিছু এলাকায় তারা চারটি বসতি স্থাপন করে।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ওই খামারের বাকী জমিতে চাষ করা আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে নয়জন পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ এবং চারজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিন সাঁওতাল শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ মারা যান।

পরে পুলিশ এক অভিযান চালিয়ে ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদি হয়ে গত ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ছয়শ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। পরে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরম বাদি হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কয়েকশ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

অপরদিকে পুলিশি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গোবিন্দগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই কল্যাণ চন্দ বাদি হয়ে ৪২ জন উল্লেখ করে চারশ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

গত ২৮ জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) গাইবান্ধা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনর্চাজ) সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার সাঁওতাল হত্যা মামলার চুড়ান্ত অভিযোগপত্র গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে জমা দেন।

কিন্তু ভূমি পূনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এ চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করে অন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন এবং ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন আদালতে দাখিল করেন। আদালত আগামী ২৩ ডিসেম্বর ওই আবেদনের আদেশের দিন তারিখ ধার্য করেছেন।

অপরদিকে একই সময়ের ঘটনায় দায়িত্ব পালনকালে হামলায় পুলিশ সদস্য আহত হওয়ায় পুলিশ বাদি মামলায় একই দিন ৩৯ জন সাঁওতালকে অভিযুক্ত করে একই আদালতে আরেকটি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক মোহাম্মদ জুলফিকার আলী ভুট্টু এ চার্জশিট দাখিল করেন।

মানববন্ধনের আগে কনকনে শীত উপেক্ষা করে সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া থেকে কয়েকশ’ সাঁওতাল ও বাঙালি নারী-পুরুষ ব্যানার, ফেস্টুন ও লাল পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে কাটামোড়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দেয়।