কনকনে ঠাণ্ডায় পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দুর্ভোগে যাত্রীরা

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রীরা ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

মানিকগঞ্জবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2019, 10:17 AM
Updated : 21 Dec 2019, 11:20 AM

কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত কয়েকঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।

এই সময় পাটুরিয়া ঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়। কনকনে শীতের মধ্যে দীর্ঘ সময় ঘাট এলাকায় আটকে পড়ে যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকরা দুর্ভোগের শিকার হন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচার ভারপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জিল্লুর হোসেন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা পড়তে থাকে। এক পর্যায়ে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। এ সময় ফেরি চলাচল মারাত্মক বিঘ্নিত হওয়ায় শুক্রবার রাত ৩টার দিকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার সকালে কুয়শার তীব্রতা কমতে শুরু করলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে

এ সময়ের মধ্যে ফেরিঘাট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় বলে তিনি জানান।

এছাড়া, ঘন কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেরিস্বল্পতা।

বিআডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয় থেকে জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুটি রো রো ফেরি পাটুরিয়ায় ভাসমান কারখানা মেরামতে রাখা হয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৮টি ফেরির মধ্যে দুটি অন্য নৌপথে নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৪টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। ফেরিস্বল্পতার কারণে ঘাটে আটকে পড়া যানবাহনগুলোকে পারাপার করতে সময় লেগে যাচ্ছে।

পাটুরিয়া ঘাটের কয়েকজন যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকরা জানান, গত কয়েক দিন ধরে শীতের তীব্রতার সঙ্গে বেড়েছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে ব্যস্ততম এই নৌপথে দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শুধু পাটুরিয়া ঘাট এলাকাতেই শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত শতাধিক যাত্রীবাহী বাস, দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান এবং অর্ধশত ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি আটকা পড়ে।

শুক্রবার রাতে আসা নৈশকোচ ও বাসগুলো শনিবার বেলা ১১টায়ও নদী পার হতে পারেনি। কনকনে শীতের মধ্যে ঘাট এলাকায় আটকে থেকে যানবাহনের যাত্রীরা চরম দূর্ভোগ পোহান। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের ভোগান্তির মাত্রা ছিল বেশি। ঘাট এলাকায় শৌচাগার এবং খাবার হোটেলের স্বল্পতায় বিড়ম্বনায়ও পড়েন অনেক যাত্রী।

যশোরগামী একে ট্রাভেলস পরিবহনের একটি বাসে করে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন এরশাদ আলী।

তিনি জানান, শনিবার সকাল ৭টার দিকে গাবতলী থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বাসে ওঠেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘ সারিতে আটকা পড়ে বাসটি। বেলা ১২টায়ও তাদের বাসটি ফেরিতে উঠতে পারেনি।     

এরশাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রচণ্ড শীতের মধ্যে পরিবার নিয়ে ঘাট এলাকায় আটকে আছি। শীতের মধ্যে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। ঘাট এলাকায় খোলা জায়গায়- এর চেয়ে দুর্ভোগ আর কী হতে পারে?”

যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ভোগও কম নয়।

পাটুরিয়া টার্মিনালে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক জয়নাল মোল্লা এবং অপর একটি ট্রাকের চালকের সহকারী খোকন মিয়া বলেন, শুক্রবার সকালে তারা মালামাল নিয়ে পাটুরিয়া টার্মিনালে পৌঁছান। শনিবার বেলা ১২টায়ও তাদের ফেরির টিকেট মেলেনি।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই পথে ফেরির সংখ্যা কম, তার উপর ফেরি ঠিকমতো চালানো হয় না। এই সুযোগে ফেরির টিকেটের মূল্য নির্ধারিতের চেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে।

বিআডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জিল্লুর হোসেন আরও বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে কয়েকঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে যাত্রীদের দুর্ভোগ বিবেচনা করে যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আগে পারাপার করা হচ্ছে। বাসের চাপ কমে গেলে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে পারাপার করা হবে।