কিশোরগঞ্জ মেডিকেল হাসপাতাল নির্মাণের এক বছরেও চালু হয়নি

কিশোরগঞ্জে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল নির্মাণ শেষ হলেও প্রয়োজনীয় লোকবলের ‘অভাবে’ এখনও চালু হয়নি।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিমারুফ  আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2019, 05:06 PM
Updated : 19 Dec 2019, 05:07 PM

হাসপাতালের জন্য আনা মূল্যবান যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। রোগীদের শয্যাসহ নানা আসবাবপত্রে জমছে ধূলার প্রলেপ।

চিকিৎসা সুবিধা না পেয়ে জেলার মানুষকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

এছাড়া এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের হাসপাতালের কাজ করতে হচ্ছে কলেজ থেকে চার কিলোমিটার দূরে সদর হাসপাতালে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না।  

চার জাতীয় নেতার অন্যতম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে ২০১২ সালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার যশোদলে হাসপাতালটির নির্মাণ শুরুর আগেই কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করে ২০১১-১২ শিক্ষা বর্ষে ভর্তি শেষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

পরবর্তীতে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ শেষ হলে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক দপ্তরসমূহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়।

চলতি বছরের ১৫ অগাস্ট হাসপাতালের বহির্বিভাগ সেবা কার্যক্রম চালু হয়।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কার্যক্রম চালু না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মেডিকেল কলেজের ৩য় থেকে ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা।

শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিদিন তাদের দিনে কিংবা রাতে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে জেলা সদরে জেনারেল হাসপাতালে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজের পক্ষ থেকে যাতায়াতের বাস দেওয়া হলেও শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের নিজের খরচেই আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।

হাসপাতালের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আসাবারপত্র আসার এক বছর পরও হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা। অবিলম্বে হাসপাতাল চালুর দাবিতে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন এবং স্মারকলিপি দিয়েছেন।  

শিক্ষানবিস চিকিৎসক দেবাঞ্জন পন্ডিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাড়ে আট মাস ধরে ইন্টার্নশীপ করছি। কিন্তু আমাদের জন্য চার কিলোমিটার দূরে সদর হাসপাতালে আসা-যাওয়ার জন্য কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। আমাদের নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে আসা-যাওয়া করতে হয়। এতে করে আমাদের টাকা ও সময় দুটোই নষ্ট হচ্ছে।” 

এমবিবিএস পরীক্ষার্থী মুমতাহিনা রহমান বলেন, “ইন্টার্নদের রাতের বেলাতেও ডিউটি পালন করতে হয়। কিন্তু মেয়ে হিসেবে এটা আমাদের জন্য কঠিন; কারণ নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি চলে আসে। নিজস্ব ক্যাম্পাসে অবস্থিত হাসপাতালটি চালু থাকলে নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা থাকত না।”

অপর এমবিবিএস পরীক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “কিশোরগঞ্জের রাস্তায় অনেক জ্যাম। এই জ্যাম পেরিয়ে সদর হাসাপাতালে যেতে-আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায়। এতে আমাদের লেখা-পড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

পঞ্চম বর্ষের ছাত্র আহসান হাবীব রানা বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে আমাদের মেডিকেল কলেজের পরে অনেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ইতিমধ্যে হাসপাতালসহ চালু হয়ে গেছে।”

তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ফারহানা হক তিথি বলেন, “সদরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়। আমাদের কষ্ট লাঘবে দ্রুত হাসপাতালটি চালু হওয়া প্রয়োজন।”  

তবে অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আসাবাবপত্র আসার পর প্রায় এক বছরেও হাসপাতাল চালু না হওয়ার কারণ হিসেবে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সজল কুমার সাহা চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়সহ আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ না হওয়ার কথা বলেন।

তিনি বলেন, লোকবল নিয়োগ না হওয়ার কারণেই শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নি চিকিৎসকদের এবং সেই সাথে সাধারণ জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থী, ইন্টার্নি চিকিৎসক এবং জনগণের মঙ্গল হবে।

চিকিৎসা সুবিধা না পাওয়ার কারণে সময় ও অর্থ ব্যয় করে অন্যত্র যেতে হচ্ছে বলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

যশোদল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ সুলতান রাজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়ির সামনে এই হাসপাতালের সামনে দিয়ে এলাকার গরীব দুখী মানুষ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, ভাগলপুর যায়। এতে করে রোগী ও স্বজনদের অর্থ ও সময় নষ্টসহ অনেক ভোগান্তি হয়। সংকটাপন্ন  অনেক রোগী পথেই মারা যায়।

“অথচ আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে নির্মিত হাসপাতালটি চালু হলে শুধু আমরা নয় পুরো জেলাবাসী উপকৃত হতো।”

এ ব্যাপারে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, “ডাক্তারসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগের বিষয়টি আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করেছি। আশা করি, দ্রুত হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে।”