চরের পতিত জমিতে হাঁস পেলে স্বাবলম্বী মেঘনা পাড়ের দেলোয়ার

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার দেলোয়ার মিজি দুর্গম চরের পতিত জমিতে হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2019, 05:05 AM
Updated : 16 Dec 2019, 05:20 AM

এক সময় নদীতে মাছ ধরে ও কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা দেলোয়ার ‘নদীর কাছেই হেরেছেন বহুবার; নদী ভাঙনের’ শিকার হয়ে হারিয়েছেন সব।

২০০৭ সালের সিডর ঘূর্ণিঝড়ে সহায় সম্বল হারানো মেঘনা পাড়ের দেলোয়ার এখন সহস্রাধিক হাঁসের খামার মালিক।   

হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী ইউনিয়নে মেঘনা নদীতে নতুন করে জেগে ওঠা ‘মধ্য চর’ এ গড়ে তুলেছেন এ হাঁসের খামার।

দেলোয়ার মিজি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী ইউনিয়নের মধ্যচর এলাকার ছানাউল্যাহ মিজির ছেলে। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে মিজি দ্বিতীয়। বিয়ে করেছেন। সংসারে তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েও রয়েছে।

দেলোয়ারের খামার দেখতে গেলে তার যাত্রা শুরুর গল্পে তিনি বলেন, এক সময় নদীতে মাছ ধরা ও কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জীবিকার প্রয়োজনে স্ত্রী-সন্তানের সুখের আশায় তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কয়েকবার নদীভাঙনের শিকারও হন তিনি।

২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও নদীভাঙন তাকে বসতঘর ছাড়া করলেও মনোবল হারাননি তিনি।

এরপর বরিশাল জেলার হিজলা গৌরবদী ইউনিয়নের চরজাংপুর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে চার বছর বসবাসের পর মাটির টানে নিজ এলাকা চরভৈরবীতে ফিরে আসেন।

নদীতে ‘মাছ ধরার পাশাপাশি কৃষি কাজ করে’ কোনোমতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটাতে শুরু করছিলেন।

“আড়াই বছর আগে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাঁস পালনের কথা জানতে পেরে আগ্রহী উঠে দেলোয়ার। চরভৈরবী ইউনিয়নে মেঘনা নদীতে নতুন করে জেগে ওঠা ‘মধ্য চর’ এ শুরু করেন হাঁসের খামার।”

দেলোয়ার বলেন, “আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ঋণ করে অর্থের ব্যবস্থা করি। দুই বছরে আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করি।

“এখন আমি কারো কাছে ঋণী নই। আমি এখন স্বাবলম্বী। হাঁসের খামার আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে।”

দেলোয়ারের খামারে ৫/৬ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এতে তাদের পেছনে প্রতিমাসে তার ব্যয় হয় ৬০ হাজার টাকারও বেশি।

প্রথমে দুইশ হাঁসের বাচ্চা নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করেন জানিয়ে দেলোয়ার বলেন, এখন তার খামারে চার হাজারের বেশি হাঁস রয়েছে। নদীতে থাকা শামুক, মাছসহ প্রাকৃতিক খাবার খেতে দেন হাঁসকে।

এ সব হাঁস থেকে প্রতিদিন তিনি দুই হাজার ডিম পান। হাঁস এবং ডিম বিক্রি করে তিনি প্রতিমাসে আয় করছেন লাখ টাকারও বেশি।

“আমি যখন হাঁসের খামার শুরু করি তখন আমার বেশকিছু হাঁস মারা যায়। কিন্তু আমি মনোবল হারাইনি। ধৈর্য্য ধরে সবকিছু মোকাবেলা করেছি। আমি এখন ভালো আছি।”

সরকারিভাবে সহায়তা পেলে হাঁসের খামারের পরিধি আরও বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে বলে জানালেন দেলোয়ার।

চরভৈরবী ইউনিয়নের জেগে উঠা নতুন চরের পাশের বাবুরচর, চোকদার কান্দি, হাওলাদার কান্দি, বেপারী কান্দি ও আখনকান্দি এলাকার যুবকরা দেলোয়ার মিজির হাঁসের খামার দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন।

স্থানীয় সবুজ হোসেন ও ছানাউল্যাহ দেওয়ান বলেন,“আমরা দেলোয়ার ভাইয়ের হাঁসের খামার দেখে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছি। দেলোয়ার ভাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করে জেনে নিচ্ছি। কারণ, আমাদের মতো দেশে অনেক বেকার যুবক রয়েছে। আমরা এই ধরনের হাঁসের খামার দেয়ার চিন্তাভাবনা করছি।“

দেলোয়ারের হাঁসের খামারের শ্রমিক নাদিম আহমদ বলেন, “এখানে প্রায় আড়াই বছর কর্মরত রয়েছি। এ খামারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে।”

আরেক শ্রমিক মনির মোল্লা বলেন, “আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ সুখেই রয়েছি।“

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, চরভৈরবী ইউনিয়নে মেঘনা নদীর বুকে আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জেগে উঠা ‘মধ্যচর’ এলাকায় পরিত্যক্ত জমিতে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন দেলোয়ার মিজি।

“তার সাফল্যগাঁথা অন্য যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”

উপজেলা পরিষদ ও যুব উন্নয়নের পক্ষ থেকে আর্থিক কিংবা যে কোনো ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হবে বলে নূর জানান।