গাজীপুরে ফ্যান কারখানার আগুনে গেল ১০ প্রাণ

গাজীপুরে লাক্সারি ফ্যান কারখানায় ভয়াবহ আগুনে ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 01:50 PM
Updated : 15 Dec 2019, 07:25 PM

কেরাণীগঞ্জে একটি প্ল্যাস্টিক কারখনায় অগ্নিকাণ্ডে ১৯ শ্রমিকের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই ফের কারখানায় আগুনে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. জাকারিয়া খান জানান, রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা এলাকায় রওজা হাইটেক-এর ওই ফ্যান কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

নিহতরা হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মার্তা এলাকার শামীম (২৫) ও মো. রাশেদ (২৫), সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামের উত্তম (২৫), বাড়িয়া এলাকার  ফয়সাল (২৫), আপারখোলা গ্রামের পারভেজ (১৮), দিনাজপুরের দাওতপুর গ্রামের লিমন (২০), ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের তরিকুল (২০), রংপুরের কচুলতার ফরিদ (২০), নরসিংদীর সজল (২০) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইউসুফ (৩০)।

আহতদের মধ্যে দুইজনকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন- কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২০) এবং গাজীপুর সদরের যামুনা গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. হাসান (১৯)।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জাকারিয়া বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগলেও তারা সন্ধ্যা ৫টা ৫২ মিনিটে ওই কারখানার তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগার খবর পান।

“ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সাড়ে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভে যায়।”

তিনি জানান, তৃতীয় তলায় একটি কক্ষের দরজার কাছে আগুনের সূত্রপাত হলে শ্রমিকরা ভেতরের দিকে চলে যান। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তারা ভেতরে আটকা পড়েন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর তৃতীয় তলার কক্ষ থেকে ১০ শ্রমিককের লাশ উদ্ধার করা হয়।

জাকারিয়া বলেন, ওই সময় কারখানায় ১৯ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। কারখানার মালিকের নাম মো. জাহিদ বলে জানা গেলেও কর্তৃপক্ষের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।

“প্রাথমিক আলামত দেখে মনে হচ্ছে ১০ জনই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।”

এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জেলা প্রশাসক তরিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

দাফন-কাফনের জন্য নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কারখানার গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

ওই ফ্যান কাখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হাসান ঢালী সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারি বিধি মোতাবেক নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া নিহত শ্রমিকরা কারখানা থেকে যে বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস পেতেন তাদের পোষ্যদের আজীবন সে সব সুবিধাদি প্রদান করা হবে।”