রাজশাহী পলিটেকনিকের ৪ জনের ছাত্রত্ব বাতিল, রাজনীতি নিষিদ্ধ

অধ্যক্ষকে টেনে হিঁচড়ে পুকুরের নিক্ষেপ করার ঘটনায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চার শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 12:48 PM
Updated : 15 Dec 2019, 12:49 PM

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত সোমবার ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন।

এছাড়া শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই প্রতিষ্ঠানে আগামী পাঁচ বছর রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথাকাটাকাটির জেরে গত ২ নভেম্বর অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদকে তারা লাঞ্ছিত করেন; এক পর্যায়ে তারা অধ্যক্ষকে টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি পুকুরে ফেলে দেন।

ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শাস্তি হওয়া ১৬ জনের মধ্যে চার শিক্ষার্থীর স্থায়ী ছাত্রত্ব বাতিল, পাঁচজনের মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা এবং সাতজনকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য কোনো ইন্সটিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

“এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

অধ্যক্ষ জানান, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজশাহী পলিটেকনিকে পাঁচ বছর রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মিডটার্ম পরীক্ষায় ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনকে অনুরোধ করলে গত ২ নভেম্বর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। ওইদিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

এ ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে আসামি করে অধ্যক্ষ মামলা করেছেন।

এছাড়া ঘটনাটি তদন্তে ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।

গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের উপর ভিত্তিতে সভায় এই ১৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

ছাত্রত্ব বাতিল হওয়া ছাত্ররা হলেন: এ ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্রো মেডিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-২০১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ছাত্র মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-২০১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।

সরাসরি ঘটানার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদপত্রসহ অনান্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য আটকে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

এরা হলেন: ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন।

এছাড়া পরোক্ষভাবে ঘটনায় জড়িত থাকায় সাত শিক্ষার্থীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলির (টিসি) সুপারিশ করা হয়েছে।

এরা হলেন: ২০১৫-২০১৬ সেশনের পাওয়ার বিভাগের ৬ষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ২০১৬-২০১৭ সেশনের ইলেকট্রনিক্স ৭ম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডু, মেকাট্রনিক্স ৭ম পর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের মহেদি হাসান, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ওমর আজিজ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের ৩য় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার ৩য় পর্বের মাসুদ রানা মীম।

তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি চলমান রেখে সুষ্ঠুভাবে একাডেমিক কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। এ কারণে আগামী পাঁচ বছর এখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ছাত্রলীগের টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ১১১৯ নম্বর কক্ষটি ভেঙ্গে ছাত্র কমনরুম বৃদ্ধিরও সুপারিশ করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ আরও বলেন, বর্তমানে এখানকার শিক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিনা পোশাকে কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়েও কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, এ ঘটনায় অধ্যক্ষের করা মামলাটি প্রথমে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তদন্ত করছিল। পরে সেটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঘটনার হোতা সৌরভসহ এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া এজাহারের বাইরে থাকা আরও ১৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলছে। শীঘ্রই তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।