খুলনায় পাটকল শ্রমিকের জানাজা, থমথমে শিল্পাঞ্চল

আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া খুলনার পাটকল শ্রমিক আবদুস সাত্তারের লাশ জানাজা শেষে পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2019, 02:16 PM
Updated : 13 Dec 2019, 02:16 PM

মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোয় চলমান এই কর্মসূচির চতুর্থ দিনে দুই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে শ্রমিকনেতারা জানিয়েছেন।

শুক্রবার বিকালে খালিশপুরে প্লাটিনাম জুবিলী মিল গেটের সামনে গিয়ে থমথমে পরিবেশা দেখা গেছে। বেশির ভাগ শ্রমিক শুয়ে আছেন। তাদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। অনেকে চুপচাপ বসে আছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন আসছেন। এলাকায় কোলাহল দেখা যায়নি।

অন্য মিলগুলোর সামনেও লোক চলাচল কম। শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা পাঁচতালা কলোনিতে গিয়েও থমথমে পরিবেশ দেখা গেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, “চতুর্থ দিন শুক্রবার পর্যন্ত দুই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়েছেন। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে অসুস্থ শ্রমিকের সংখ্যা।”

অনশনের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার প্লাটিনাম জুবলি জুট মিলের শ্রমিক আব্দুস সাত্তার (৫৫) মারা যান।

প্লাটিনাম জুটমিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনশন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সাত্তার অসুস্থ হন। প্রথমে তাকে খালিশপুর ক্লিনিকে নেওয়া হয়। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

শুক্রবার সকাল ১০টায় মিলের সামনে জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পাঠানো হয় বলে জানান শাহানা শারমিন।।

আব্দুস সাত্তার প্লাটিনাম জুট মিলের হেসিয়ান তাঁতের শ্রমিক ছিলেন। জানাজা অনুষ্ঠানের সময় খুলনা বিভাগীয় শ্রম কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা হস্তান্তর করেন।

এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, “শারীরিক অসুস্থতার কারণে আব্দুস সাত্তার মারা গেছেন।”

তিনি তার পরিবারের পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সাত্তারের পরিবারকে সব ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনশনরত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

“বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে ১৫ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা হবে। আশা করি মজুরি কমিশনের বিষয়ে সমাধান হবে।”

বুধবার রাতে প্রতিমন্ত্রীর বাসায় শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক হয় বলে জানান প্লাটিনাম জুটমিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন।

তিনি বলেন, বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু শ্রমিকনেতারা তা মানেননি।

মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।

শ্রমিকনেতা খলিলুর রহমান বলেন, “এবার আর কোনো প্রতিশ্রুতি নয়। মজুরি কমিশন না নিয়ে আমরা এখান থেকে উঠব না। বেঁচে থাকার এবং রুটিরুজির দাবিতে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা ঘরে ফিরবে না।”

মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ছয় দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। ১০ ডিসেম্বর শ্রমিকরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।

২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ পাট খাতকে লাভজনক করার অঙ্গীকার করে। তারা ক্ষমতায় আসার পর বিজেএমসিকে লাভজনক করতে কর্মপরিকল্পনা নেয়। ২০০৯ সালে পাটকল বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

এরপরই বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেওয়া বিভিন্ন পাটকল সরকারি করে নতুন করে চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শ্রমিকনেতাদের অভিযোগ, কর্মকর্তারা অসময়ে পাট কিনতে গিয়ে গচ্চা দেন। আবার বিপণন বিভাগের অদক্ষতার কারণে পণ্য অবিক্রীত থাকে। এসব কারণে বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে।

বর্তমানে শ্রমিক-কর্মচারীদের দুই থেকে চার মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকনেতারা।