সুন্দরবন পরিদর্শনে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল

জাতিসংঘ ও আইইউসিএনের চার সদস্যের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল সুন্দরবন পরিদর্শন শুরু করেছে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 04:57 PM
Updated : 11 Dec 2019, 05:05 PM

বুধবার দুপুরে মোংলার ফুয়েল জেটি থেকে দলের সদস্যরা পরিদর্শন শুরু করেন বলে জানান বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও মো. মাহমুদুল হাসান।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বনবিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রয়েছেন বলেও তিনি জানান।

প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ইউনেস্কোর নয়াদিল্লি অফিসের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ফর ন্যাচারাল সায়েন্স বিভাগের মিস্টার গাই ব্রুক, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সেন্টারের অ্যাকান নাকামুরা, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার-আইইউসিএনের এলিনা অসিপভা ও এন্ড্রো ওয়াইট।

ডিএফও মাহমুদুল হাসান বলেন, দুপুরে বাগেরহাটের মোংলার ফুয়েল জেটি থেকে প্রতিনিধি দলটি সুন্দরবন বিভাগের অত্যাধুনিক নৌযান বন বিলাসে করে সুন্দরবনে গিয়েছেন। আগামী শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) তাদের সুন্দরবন থেকে ফেরার কথা রয়েছে।

“এই চার পরিবেশবিদ সুন্দরবনে চারদিন অবস্থান করবেন। এ সময় তারা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের বর্তমান অবস্থান সরেজমিনে পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।”

পাশাপাশি তারা বনের আশপাশে অবস্থিত শিল্প কলকারখানা বিশেষ করে বাগেরহাটের রামপাল, বরগুনার তালতলী ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান মাহমুদুল হাসান।

“সেইসঙ্গে সমুদ্রবন্দর মোংলার পশুর চ্যানেলসহ অন্যান্য নদী খননের ফলে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর প্রতিবেশগত প্রভাবও পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করবেন।”

তিনি বলেন, এই যৌথ মিশনের দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ কমিটি সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর প্রতিবেশগত হুমকির বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করবে।

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সুন্দরবন পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে বনবিভাগ সুন্দরবন বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিলসহ বনে অবাঞ্ছিত লোকজনের প্রবেশ ও সব ধরনের বনজ-জলজ সম্পদ আহরণ বন্ধ রেখেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

প্রতিনিধি দলটি দুপুরে মোংলায় সুন্দরবন বিভাগের রেস্ট হাউজে এসে পৌঁছলে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান তাদের স্বাগত জানান।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চে ইউনেস্কোর তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

তারা তাদের প্রতিবেদনে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রকল্পটি অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে বলেন। তা না হলে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা বাতিল করে একে ‘বিপন্ন’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে পোল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির অধিবেশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়।

এরপর মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি প্যারিসে ইউনেসকো সদর দপ্তরে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যুক্তিগুলো তুলে ধরেন এবং প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে ইউনেসকোর সমর্থন প্রত্যাশা করেন।

শেষ পর্যন্ত এ বছর জুলাই মাসে আজারবাইজানের বাকুতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম সভায়  ‘বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের’ তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের অন্তর্ভুক্তি আপাতত এড়াতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্বের বর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’র তালিকাভুক্ত করে।

২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে।

চুক্তির পর থেকেই তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।

তাদের ভাষ্য, এই প্রকল্প সুন্দরবন ও সেখানে থাকা বণ্যপ্রাণীদের জন্য ‘ভয়াবহ হুমকি’র কারণ হয়ে উঠবে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ও উন্নতমানের আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করা হবে। এতে সালফার, ফ্লাই অ্যাশ ও অন্যান্য উপাদানজনিত বায়ুদূষণের পরিমাণ ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ থাকবে, যার ফলে পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।