কৃষকের কাছে 'লাভের ফসল' যে সরিষা

অল্প দিনে বেশি ফলন পাওয়ায় যশোরে কৃষকরা এবার তিনশ হেক্টর বেশি জমিতে চষেছেন উচ্চফলনশীল বিশেষ এক জাতের সরিষা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 06:20 AM
Updated : 11 Dec 2019, 06:25 AM

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবন করেছে সরিষার এ জাতটি। এতে সরিষার ফলন যেমন ভালো হচ্ছে তেমনই সরিষা ওঠার পরপরই বোরো ধান চাষ করে কৃষক বাড়তি সুবিধা পান বলে জানালেন চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা।

সে কারণে চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শা উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে বলছেন শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল।

তিনি জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ১৫শ’ হেক্টর জমিতে 'বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা।

গত মৌসুমে এক হাজার দুইশ’ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার তিনশ’ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।

বছরের পর বছর স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করে ফলনে মার খাওয়ায় হতাশ কৃষকরা সরিষা চাষ কমিয়ে দিয়েছিল বলে জানালেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ কুমার বালা।

“তবে এবার কৃষি বিভাগের সহায়তায় ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল বারি-১৪, বারি-৯, বিনা-৯/১০, সরিষা-১৫, সোনালি সরিষা (এসএস-৭৫) ও স্থানীয় টরি-৭ জাতের সরিষা আবাদ করছে কৃষকরা। 

"এসব জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি।

কম সময়ে ভালো ফলন পাওয়ায় যশোরের কৃষকরা ঝুঁকেছেন সরিষা চাষে। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর ৩০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন যশোরের কৃষকরা। বেনাপোল থেকে তোলা ছবি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সরিষা তোলার পর ওই জমিতে বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।"

কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ গৌতম কুমার শীল।

বারি-১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের ‘৭৫-৮০ দিনে ফল ‘ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি যোগ করেন, সরিষা তোলার পর ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।

এ বছর দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষা চাষ করা  উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম প্রতি বিঘায় খরচ করেছেন প্রায় চার হাজার টাকা।

“সরিষার গাছ, ফুল ও ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।”

গত বছর সরিষার দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় এবারও সরিষা চাষ করেন শার্শা গ্রামের কৃষক আফজাল শেখ।

এ বছর উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরো অনেকেই ঝুঁকে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

এ জাতের সরিষা চাষের পর ওই জমিতে ধানের আবাদও ভালো হয় এবং চাষে খরচও কম লাগে বললেন ঘিবা গ্রামের মহিউদ্দিন।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেন তিনি।

কেন এ জাতের সরিষাকে লাভের ফসল চাষীরা বলছেন তা আরো স্পষ্ট করে বললেন বেনাপোলের বারোপোতা গ্রামের আব্দুল মোমিন।

মোমিন বলেন, বারি-১৪ সরিষা গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে, এতে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে।

“এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণও কম লাগে।”

গত বছর স্থানীয় বাজারে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবার এ উপজেলার ৯০০ কৃষক এ সরিষা চাষ করেছেন জানান কৃষি কর্মকর্তারা। আগামীতে এ জাতের সরিষা চাষে কৃষকরা আরও আগ্রহী হবেন বলে তাদের ধারণা।