উপাচার্যের ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ প্রকাশ করল জাবির আন্দোলনকারীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবার তার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ প্রকাশ করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2019, 04:37 PM
Updated : 10 Dec 2019, 06:01 PM

মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে পুস্তকাকারে এই খতিয়ান প্রকাশ করা হয়।

মোট ২২৪ পৃষ্ঠার এ পুস্তিকায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১১টি খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ দেখানো হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দুর্নীতি বিরোধী সাতটি ইশতেহারও দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর সংগঠক মুসফিক-উ-সালেহীনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ পুস্তিকার ‘ভূমিকা’ পাঠ করেন আন্দোলনের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন।

এ সময় তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান এই আন্দোলনের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ এই উপাচার্যের অপসারণ হবে এবং এর মধ্য দিয়ে আগামী দিনে যেকোনো দুর্নীতি বন্ধের পথ সুগম হবে।”

অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, “উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম নিয়মিত সব অনিয়ম করে যাচ্ছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য একটা বড় বাজেট আসার পরেই উপাচার্যের আসল রূপ বেরিয়ে পড়ে। যখন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তখনই তিনি হামলা-মামলা দিয়েছেন।”

ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ পাঠ করেন ‘দুর্নীতিবিরোধী ইশতেহার’।

‘ইশতেহার’ পাঠকালে মাহথির বলেন, “আন্দোলনের বর্তমান একদফা দাবি হলো দুর্নীতিগ্রস্ত উপাচার্যের অপসারণ। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ কোনো ভিসি পতনের আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম না; বরং উপাচার্যের অপসারণের দাবিটি আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় একটি বিশেষ স্তরে উঠে আসা সর্বাত্মক কর্মসূচি মাত্র।”

সংবাদ সম্মেলন শেষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।

কর্মসূচিগুলো হলো-বুধবার উপাচার্যের অপসারণ দাবি ও আন্দোলনকারীদের ওপর ‘ছাত্রলীগের’ হামলার প্রতিবাদে গণসংযোগ ও স্থিরচিত্র প্রদর্শন; বৃহস্পতিবার হবে হল নির্মাণে ‘অনিয়মের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক খবির উদ্দিন, আব্দুল জব্বার হাওলাদার, তারেক রেজা, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, শামীমা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ প্রমুখ।

এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ২৩ অগাস্ট থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

কয়েকদিন আন্দোলন চলার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় আন্দোলনকারীরা দুর্নীতির তদন্তের দাবি করেন। কিন্তু দুর্নীতির পরবর্তীতে তদন্তের দাবি পূরণ না করা হলে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।

আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ নভেম্বর দুপুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এতে আট শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।

হামলার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। একমাস বন্ধ থাকার পর গত ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। খোলার দিন থেকেই আন্দোলনকারীরা ফের আগের কর্মসূচিতে ফিরে আসেন।