গাইবান্ধায় অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং, দুর্ঘটনার শঙ্কা

গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনের দুইপাশে দুটি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ক্রসিংয়ে কোনো গেইট নেই; নেই গেইটম্যান। প্রতিদিন শত শত মানুষ ও যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইনের উপর দিয়ে চলাচল করছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2019, 04:21 PM
Updated : 9 Dec 2019, 04:21 PM

যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

সোমবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের এই লেভেল ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, খোলা এই দুই লেভেল ক্রসিং দিয়ে মানুষ চলাচল করছে কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই। এদিকওদিক না তাকিয়ে রেলক্রসিং অতিক্রম করছে রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা, ছোট-বড় ট্রাকসহ নানা ধরনের যানবাহন।

মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জিরাই গ্রামের অটোরিকশা চালক কাশেম মিয়া বলেন, “দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে; কিন্তু কী করব। সবসময় দ্রুত যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ট্রেন আসছে কিনা তা দেখার কথা মনে থাকে না।”

তিনি জানান, ক্রসিং দুইটির মধ্যে মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনের আধাকিলোমিটার উত্তরে বামনহাজরা রেল ক্রসিং। এক সময় এই ক্রসিং পারাপার হয়ে পার্শ্ববর্তী সাঘাটা উপজেলার কচুয়া, কামালেরপাড়া ও জুমারবাড়ি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ হেঁটে মহিমাগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জে যাতায়াত করতেন। সেসময় লোকজন কম ছিল।

“কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রেল ক্রসিংয়ের উভয় পাশে রাস্তা পাকা হয়েছে। এ কারণে গোবিন্দগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। ফলে এই রেলক্রসিংয়ের ব্যস্ততা বেড়েছে। এই ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও পথচারী চলাচল করছে। রাস্তা পাকা হওয়ায় রেল গেটটির গুরুত্ব বেড়ে গেছে।”

অন্যটি হলো মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনের আধাকিলোমিটার দক্ষিণে জিরাই রেল ক্রসিং। এই ক্রসিংয়ের উভয়পাশের রাস্তাও পাকা। অরক্ষিত এই রেল ক্রসিং অতিক্রম করে দুর্ঘটনার আশংকা নিয়েই যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে।

রেল ক্রসিংয়ের পূর্বপাশে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জিরাই, বাঙ্গাবাড়ি, পান্তাপাড়া গ্রাম। এসব গ্রামের মানুষকে জিরাই রেলক্রসিং পারাপার হয়ে মহিমাগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে হচ্ছে। একইভাবে মহিমাগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জের শত শত মানুষ এই রেল ক্রসিং পার হয়ে বাঙ্গাবাড়ি ও পান্তাপাড়া গ্রামে যায়।

মহিমাগঞ্জ এলাকার স্কুলশিক্ষক এখলাছুর রহমান বলেন, পদ্ধতিগত কারণে মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনটি ইংরেজি ‘ইউ’ আকৃতির। মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশন। ফলে প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে একেবারে কাছে না আসা পর্যন্ত কোনো ট্রেন দেখতে পাওয়া যায় না। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারী ও যানবাহনকে রেল ক্রসিং দুটি অতিক্রম করতে হচ্ছে।

একই এলাকার ব্যবসায়ী মনজুর হাবীব বলেন, রেলক্রসিং দুইটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। কেবল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে রেল ক্রসিং দুটির পাশে একটি ফলকে লিখে রেখেছে, ‘এই রেল ক্রসিং-এ কোনো গেইটম্যান নাই। যাত্রী সাধারণকে নিজ দায়িত্বে পারাপার করতে হবে’।

বর্তমানে ফলক দুটিও ময়লায় ঢেকে যাওয়ায় মানুষের চোখে আর পড়ে না বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি মহিমাগঞ্জের সচেতন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উত্তরাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগ কর্তৃপক্ষ বরাবর এই রেলক্রসিং দুটিতে জরুরিভিত্তিতে রেলগেইট স্থাপন ও গেইটম্যান নিয়োগের আবেদন করেছে।

এ প্রসঙ্গে মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশন মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, সান্তাহার-বোনারপাড়া-লালমনিরহাট রেলরুটের একটি স্টেশন মহিমাগঞ্জ। এই স্টেশনের উপর দিয়ে প্রতিদিন ১৬টি ট্রেন যাতায়াত করে। ফলে দুইটি রেলক্রসিং খুবই গুরুক্তপূর্ণ।

“তাই রেলক্রসিং দুইটিতে গেইট স্থাপন ও গেইটম্যান নিয়োগে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উত্তরাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।”