গুঁড়িয়ে দেওয়া হল আ. লীগ নেতার অবৈধ নৌবন্দর

পাবনার বেড়া পৌরসভা মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির এক দশক আগে গড়া একটি অবৈধ নৌবন্দর উচ্ছেদ করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2019, 02:21 PM
Updated : 9 Dec 2019, 04:35 PM

হুরাসাগর নদের পাড়ে বৃশালিখা বেসরকারি রাজঘাট নামের এই নৌবন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চালানো অভিযানে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ সময় পণ্য খালাস করতে আসা নয়টি জাহাজ ও নয়জন শ্রমিককে আটকও করা হয়।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানে বিপুল সংখ্যক র‌্যব ও পুলিশ সদস্যসহ বিআইডব্লিউটিএ-এর কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।

এই অবৈধ নৌবন্দর স্থাপনের ফলে গত প্রায় এক দশকে সরকারের অন্তত একশ কোটি টাকার রাজম্ব ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

তবে এ কারণে কাউকে গ্রেপ্তার বা কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডোর মাহবুবুল আলম বলেন, বিষয়টির আইনগত খুঁটিনাটি দেখে পরবর্তীতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিআইডব্লিউটিএ-এর অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ বন্দর তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে তা পরিচালনা করে আসছিলেন বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন।

“এতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছিল সরকার। কয়েক দফা নোটিশ দেওয়ার পরও তা বন্ধ না করায় অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করল বিআইডব্লিউটিএ।”

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া উপ-সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, গত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখায় হুরাসাগর নদে ছোট পরিসরের এ বন্দরে অবৈধভাবে পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করা হচ্ছিল।

“বৃশালিখা ঘাটের মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই রাষ্ট্রায়ত্ত বাঘাবাড়ী নৌবন্দর। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মালবাহী নৌযানগুলো বৃশালিখার অবৈধ ঘাটে নোঙর করায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।”

অভিযানে বন্দরের ওজন যন্ত্র, অফিস কক্ষ, আটটি ঘাট ও চারটি সংযোগ সড়ক ধ্বংস করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

হাবিবুর রহমান আরও জানান, অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ বন্দরে পণ্য খালাস করতে আসা নয়টি জাহাজ আটক করে নয়জনকে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

এ সময় নৌযান শ্রমিক ও মালিকদের অবৈধ ঘাটটি ব্যবহার না করে রাষ্ট্রায়ত্ত নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ি ঘাট ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয় বলে হাবিবুর রহমান জানান।

অভিযান চলাকালে স্থানীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তারা বিক্ষোভ করেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, বৃশালিখা ঘাটে প্রতিদিন কমপক্ষে আট থেকে দশ কোটি টাকার পণ্য ওঠা-নামা হয়। এতে কয়েক হাজার মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত। হঠাৎ করেই এমন উচ্ছেদে তারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন। অন্তত কিছুদিন সময় দেওয়া উচিত ছিল।

দুপুরে অভিযান পরিদর্শনে আসেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডোর মাহবুবুল আলম।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত আইনানুসারে কেবল বিআইডব্লিউটিএ দেশে নৌবন্দর পরিচালনায় বৈধ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সরকার খেয়া পারাপারের জন্য ঘাট ইজারা দিতে পারে, কিন্তু পণ্যবাহী জাহাজ নোঙর করে বৃশালিখা ঘাটে যেভাবে বন্দরের কার্যক্রম চালানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ।

“বৃশালিখা ঘাটের কারণে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে হারিয়েছে। বিষয়টির আইনগত খুঁটিনাটি দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, কোনোভাবেই আর এই অবৈধ কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। বাঘাবাড়ি ঘাটে নোঙর করা প্রতিটি মালবাহী জাহাজকে প্রতি টন মাল খালাসের জন্য ৩৪.৫০ টাকা দিতে হয়। বৃশালিখা ঘাটের কারণে গত ১০ বছরের সরকারের অন্তত একশ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

এ ব্যাপারে বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে তার ঘনিষ্ট সহযোগী আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে, ঘাট থেকে অর্জিত রাজস্ব অবশ্যই স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ পাবে। যেহেতু বৃশালিখা ঘাট পৌর এলাকার মধ্যে, তাই পৌরসভা সেখান থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করেছে।”

বৃশালিখা বেসরকারি রাজ ঘাট থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত বাঘাবাড়ি ঘাট। গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবৈধ ঘাটে সরকারি ঘাটের চেয়ে কম টাকায় সিমেন্ট, সার, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য ওঠানামার কাজ চলছিল।