মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ৯ ডিসেম্বর ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়।
এ যুদ্ধের সময় শহীদ হন-কাজী সালাউদ্দিন, মেজবাহউদ্দিন নৌফেল, আব্দুল ওয়াহাব, সোহরাব হোসেন, আব্দুল আওয়াল, আব্দুল হামিদ ও মজিবুর রহমান।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ায় ওই গ্রামের বাকেল উদ্দীন মন্ডল, হযরত উদ্দীন মন্ডল, হাশেম আলী মন্ডল ও আবু খাঁকেও পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে।
এ দিবস উপলক্ষে সোমবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন শহরের আলীপুর কবরস্থানে শহীদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানায়।
সেদিনের যুদ্ধের গল্প বলতে গিয়ে ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আমিনুর রহমান ফরিদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে পাক বাহিনীর একটি জিপ গাড়ি ও একটি ট্রাক ফরিদপুর ধোপাডাঙ্গা চাঁদপুরের দিকে আসছে। তাতে রাজাকারদের জন্য চাউল-আটা, রসদ ও অস্ত্র আনা হচ্ছে।
“এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ ঘটনাস্থলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অপর দিকে বোয়ালমারীর নতুবদিয়া ক্যাম্প থেকে হেমায়েতউদ্দীন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং গোরদিয়া ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াসের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পাক হানাদার বাহিনীর ও রাজাকারদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে।
একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা তিন-চার ভাগে বিভক্ত হয়ে গুলি করতে করতে পিছু হটে করিমপুর গ্রামে আশ্রয় নেন। তখন পাকবাহিনী গ্রামটি ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় নেওয়া বাড়িতে হানাদাররা আগুন ধরিয়ে দিলে সাত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন বলে জানান তিনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৭ ডিসেম্বর করিমপুর থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ সংগ্রহ করে শহরের আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্থানসহ গণকবরগুলো চিহ্নিত করে সেখানে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মৃতিফলক নির্মাণ করা গেলে চেতনা ছড়িয়ে পড়বে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে।