নেত্রকোণায় বোমা হামলায় নিহতদের নীরবতায় স্মরণ

নেত্রকোণা শহরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ের সামনে ১৪ বছর আগে জেএমবির বোমা হামলায় নিহতের স্মরণে ‘স্তব্ধ কর্মসূচি’ পালিত হয়েছে।

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2019, 07:25 AM
Updated : 8 Dec 2019, 07:25 AM

রোববার সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে পাঁচ মিনিটে এ কর্মসূচি পালিত বলে জানিয়েছেন আয়োজক ‘ট্র্যাজিডি দিবস উদযাপন কমিটি’র নেতারা।

এ সময় শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জনসাধারণকে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং  যানবাহনগুলোকে থেমে থাকতে দেখা যায়। পরে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রতিবাদী মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এর আগে শহরের অজহর রোডে জেলা উদীচী কার্যালয়ের পাশে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ।

২০০৫ সালের এ দিনে শহরের অজহর রোডে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও শতদলের কার্যালয়ের সামনে জেএমবির আত্মঘাতী বোমা হামলায় উদীচীর খাজা হায়দার হোসেন ও সুদীপ্তা পাল শেলীসহ আট জন নিহত এবং অন্তত অর্ধশত আহত হন।

ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নেত্রকোণা মডেল থানায় দুইটি মামলা করে। হত্যা  মামলার রায়ে ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামি আসাদুজ্জামান চৌধুরী ওরফে পনির, সালাউদ্দিন ওরফে সোহেল ও ইউনুছ আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২।

মামলার অপর আসামি সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাই ও আতাউর রহমান সানির অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়াও বাংলা ভাইয়ের স্ত্রী ফারজানাকে খালাস দেওয়া হয়।

নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি পনির আপিল করেন। পাশাপাশি আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। শুনানির পর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে।

জেএমবির সদস্য পনির হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। পরে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেওয়ায় সর্বোচ্চ সাজার আদেশই বহাল থাকে।

পরে এ আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্যে আবেদন করেন পনির। গত ১৪ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বের আপিল বেঞ্চ আবেদনটি সেটাও খারিজ করে দেয়। ফলে ফাঁসির রায় কার্যকরে সরকারের আর কোনো আইনগত বাধা নাই। তবে আসামি চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন।

আদালতে আসামি পনিরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খন্দকার মাহবুবে হোসেন।

তিনি সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া ছাড়া এ আসামির সামনে আইনগত কোনো পথ খোলা নাই। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন না করলে বা করার পর রাষ্ট্রপতি সেটি গ্রহণ না করলে সরকার তার ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে।”

নেত্রকোণা ট্র্যাজিডি দিবসের কর্মসূচিতে নেত্রকোণা পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুল আমিন, সদর উপজেলা সংসদের সাবেক কমান্ডার আইয়োব আলী, নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সুব্রত ঘোষ, সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান খানসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

সন্ধ্যায় শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মৌলবাদ বিরোধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন রয়েছে।