কর্মীকে হয়রানি করলে নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হবে: শামীম ওসমান

কোনো কর্মীকে গ্রেপ্তার কিংবা হয়রানি করলে নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে উঠবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2019, 05:18 PM
Updated : 7 Dec 2019, 05:18 PM

শনিবার নারায়ণগঞ্জে এক জনসভায় তিনি বলেন, “আমি বেঁচে থাকতে আমার কর্মীর গায়ে কাউকে আঁচড় দিতে দেব না। কেউ যদি আমার কর্মীর গায়ে আঁচড় দেয় এই নারায়ণগঞ্জের মাটিতে এক ঘণ্টাও সে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না।”

নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর হামলার অভিযোগে ঘটনার প্রায় দুই বছর পর মামলা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এই মামলায় শামীম ওসমানের অনুসারীদের আসামি করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সাংসদ এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন।    

“এই মামলায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পোড়খাওয়া নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। আমি মনে করি এখানে আমাকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় আমার কোনো কর্মীকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হলে নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে উঠবে।”

এই মামলার প্রধান আসামি নিয়াজুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওইদিন হামলা হয়েছিল বলে দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, “অথচ সেই নিয়াজুলের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে। তাহলে নিয়াজুলের মামলা হবে না?”

দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার লামাপাড়ায় অবস্থিত নম পার্কে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এই কথা বলেন শামীম ওসমান।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ফুটপাতে হকার বসানোকে ইস্যু করে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী মিছিল বের করলে তাতে হামলা হয়। ওই হামলায় আইভী ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।

ঘটনার পরদিন আইভীর ভাই ও সমর্থকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অস্ত্র ছিনতাই ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ দেন নিয়াজুল।

ঘটনার পাঁচ দিন পর আইভীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে নিয়াজুলসহ নয় জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও এক হাজার জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দেন সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার।

পুলিশ অভিযোগ দুটি জিডি হিসেবে রেকর্ড করে এবং সদর থানার পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে পুলিশের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত ৫০০ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলেও গত ২২ মাসে সেই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি।

এদিকে, আদালতের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার সদর মডেল থানা সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তারের মামলাটি রেকর্ড করেছে, যেখানে শামীম ওসমান সমর্থক নিয়াজুল প্রধান আসামি।

তবে এই মামলায় এখনও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, অনেক ধৈর্য ধরেছেন। অনেক চুপ থেকেছেন।

তার বক্তব্য হালকাভাবে না নিতে সাবধান করে দেন তিনি।

“আমি বেঁচে থাকতে আমার কর্মীর গায়ে কাউকে একটা আঁচড় দিতে দেব না। আমি বেঁচে থাকতে যদি কেউ আমার কর্মীর গায়ে আঁচড় দেয়, আর যদি মনে করে নারায়ণগঞ্জ শান্ত থাকবে, তাহলে আপনি বোকার রাজ্যে বাস করছেন। আমার কর্মীর গায়ে আঁচড় দিয়ে এই নারায়ণগঞ্জের মাটিতে শান্তিতে এক ঘণ্টাও কেউ ঘুমাতে পারবেন না।”

শামীম ওসমান বলেন, “মামলার একজন আসামি হিসেবে প্রশাসনকে বলতে চাই- তদন্ত করেন। যদি মনে হয় এমপিকে ধরতে অসুবিধা হচ্ছে, ধরা যায় না, তবে আমি এই মুহূর্ত থেকে দরকার হলে সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেব। কিন্তু তদন্ত করেন।”

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের জেলা সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল, সহসভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল, মহানগর সেক্রেটারি খোকন সাহা, সহসভাপতি বাবু চন্দন শীল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু প্রমুখ।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে আগের কমিটির সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল ও সেক্রেটারি এম শওকত আলীর নামই সভাপতি ও সেক্রেটারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।