“জরুরি কাজের কথা বলে গেল, ফিরল লাশ হয়ে। আমার মেয়েকে কত কষ্ট দিয়ে ওরা মেরেছে। মরার সময় মেয়েটি কতবার জানি মা-মা বলে চিৎকার করেছে।”
শোকবিহ্বল এই পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে তাদের ময়মনসিংহের বাড়ির পরিবেশ।
কান্নার মধ্যেই নাহিদা আক্তার মেয়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
বুধবার রাতে বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের একটি গলি থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রছাত্রীদের শিফট আলাদা হওয়ায় দুদিন ধরে মেয়ের মনও খারাপ ছিল বলে জানান নাহিদা আক্তার।
“তার সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল কি না তা বলতে পারছি না। বুধবার সকালে ডিম ভাজি করে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি।”
রুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন রুম্পার বাবা পুলিশ পরিদর্শক রুকন উদ্দিন।
নুসরাত হত্যার মতো রুম্পার ‘হত্যাকারীদেরও’ দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাদের প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম ও আবুল কাশেম।
ঢাকার শান্তিবাগে একটি ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থেকে লেখাপড়া করতেন রুম্পা ও তার ছোট ভাই। বুধবার (৪ ডিসেস্বর) রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর ইনার সার্কুলার রোডে রুম্পার লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার ভোর ৫টায় লাশ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের চরনিলক্ষীয়া ইউনিয়নের বিজয়নগরে নিয়ে আসা হয়। ওইদিন বেলা ১০টায় জানাজা শেষে পরিবারিক গোরস্থানে দাদী রুবিলা খাতুনের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, দুটো টিউশনি করতেন রুম্পা। সেদিনও সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে টিউশনিতে বের হন। পরে সাড়ে ৬টার দিকে শান্তিবাগের বাসার নিচে এসে ফোন করে পুরানো একজোড়া স্যান্ডেল পাঠিয়ে দিতে বলেন।
তার কথায় ক্লাস টু পড়ুয়া চাচাতো ভাই এক জোড়া স্যান্ডেল নিয়ে বাসার নিচে যায়। রুম্পা তার পায়ে থাকা স্যান্ডেল জোড়া বদলে পুরনো স্যান্ডেল পরেন। এরপর কানের দুল, আংটি, মোবাইল ফোন আর সেই স্যান্ডেল চাচাতো ভাইকে দিয়ে আবার বেরিয়ে যান।
এর কয়েক ঘণ্টা পর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে লাশ পায় পুলিশ। অন্যদিকে রুম্পা বাসায় না ফেরায় এবং তার কাছে ফোন না থাকায় পরিবারের সদস্যদের রাত কাটে উদ্বেগের মধ্যে। পরদিন তারা রমনা থানায় গিয়ে ছবি দেখে রুম্পাকে শনাক্ত করেন।