কুষ্টিয়ায় উডল্যান্ডে আগুনে ৪ জনের মৃত্যু: তদন্তে ধীরগতি

কুষ্টিয়ায় উডল্যান্ড প্লাইউড কারখানায় আগুন লাগার পর দুই সপ্তাহ চলে গেলেও কর্তৃপক্ষ তদন্ত শেষ করতে পারেনি।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2019, 03:40 PM
Updated : 7 Dec 2019, 03:50 PM

গত ২২ নভেম্বর ভোরের দিকে সদর উপজেলার বারখাদা এলাকায় কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী সড়কের পাশে ওই কারখানায় আগুন লেগে চার শ্রমিক দগ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে সবাই মারা যান।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর তদন্ত করছে বলে জানালেও তারা এখনও তাদের কাজ শেষ করতে পারেনি।

তবে তারা তাদের পর্যবেক্ষণের কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “দাহ্যসংকুল এই কারখানাটিতে অগ্নিনির্বাপণের নিজস্ব যে ব্যবস্থা ছিল তা সঠিক মাত্রাযুক্ত নয়। আমরা আমাদের মতো প্রতিবেদন তৈরি করে সদর দপ্তরে পাঠাব।”

তবে কবে নাগাদ প্রতিবেদন তৈরি হবে তা তিনি বলতে পারেননি।

কারখানাটির বিরুদ্ধে অগ্নিকাণ্ডের পর আলামত নষ্ট করারও অভিযোগ তুলেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার উপ-মহাপরিদর্শক হাসিবুজ্জামান বলেন, “ঘটনার একদিন পর আমরা জানতে পেরে সেখানে যাই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চার শ্রমিক দগ্ধ হওয়ার কোনো চিহ্নই আমরা খুঁজে পাইনি।”

তিনিও এখনও এ ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি।

“সেখানকার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছি কী কারণে বা কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত, শ্রমিকদের গায়ে আগুন ধরল কিভাবে। এখনও বলার মতো সঠিক কারণ জানতে পারিনি। সব বিষয়েই আমরা জানার চেষ্টা করছি। কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি বা অবহেলা ছিল কি না, যন্ত্রপাতি, ঠিক ছিল কি না, শ্রমিকরাই বা কতটুকু দায়ী—সব বিষয় খতিয়ে দেখতে আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। তবে শুরু থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সমর্থন ও নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য আমরা পাইনি। এখন আমরা দেখব, নিহত চার শ্রমিকের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যাতে পুনর্বাসনসহ যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়।”

ঘটনা তদন্তের জন্য কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহারকে দায়িত্ব দিয়েছে। তিনিও এখনও তদন্ত শেষ করতে পারেনি।

লুৎফুন নাহার বলেন, “ঘটনাটা পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসন জানতে পারে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গত ২৭ নভেম্বর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তখন সেখানে আপাতদৃষ্টে বোঝার কোনো উপায় নেই ঘটনা সম্পর্কে।

“কারখানায় স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চলছিল। পরে কারখানা থেকে ফুটেজ নিয়ে বোঝার চেষ্টা করি। ২২ নভেম্বর রাত ৩টা ৮ মিনিটে শুরু হওয়া ঘটনা। আগুনের শিখা, স্পার্ক করল বৈদ্যুতিক তার। তারপর পুরোটা জোনে আগুনের কুণ্ডলি, শ্রমিকের গায়ে আগুন, দৌড়াচ্ছে। একজন দৌড়ে এস পড়ে যায়।”

তিনি বলেন, “ফুটেজ দেখার পর সেখানে গিয়ে দেখি সবকিছুই অধিকতর দাহ্য। একদিকে কাঠের শুকনো গুঁড়া, তার সঙ্গে প্যারাফিনাল কেমিক্যাল ও গ্লুসহ বিভিন্ন কেমিকেলের উপস্থিতি। এসব খুব সামান্য অসর্তকতার কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে। এ জাতীয় শ্রমঘন জোনে কারখানা কর্তৃপক্ষের অধিক সতর্কতা ও কঠোর নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ  শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা, যা সেখানে ছিল না বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা পেয়েছি।

“ঘটনাস্থলেই টয়লেট আছে। সেখানে শ্রমিকরা খাওয়া-দাওয়াও সারেন। খুব স্বাভাবিক যে, কোনো শ্রমিক হয়ত খাওয়ার পর বিড়ি-সিগারেটের আগুন ফেলে থাকতে পারে। এতে সেখানে প্যারাফিনাল কেমিকেল ও ভাসমান দাহ্য গ্যাসের সংস্পর্শে দপ করে আগুন জ্বলে উঠতে পারে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে, শর্টসার্কিট থেকে বৈদ্যুতিক তারের আগুনে নয়, বরং আগুন এসে বৈদ্যুতিক তারে ধরেছে। এছাড়া কোনো মেশিনের বিস্ফোরণে আগুন লাগলে সেই মেশিনটাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা। তাতে উৎপাদন কন্টিনিউ করার কথা নয়। আগুনের ঘটনাস্থল থেকে বয়লার অনেক দূরে। সেখানে অগ্নিকাণ্ডের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”

তিনি যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন শেষ করে জমা দেবেন বলে জানান।