ধানক্ষেত দেখিয়ে নদী দখল

যশোরে জালিয়াতির মাধ্যমে একটি নদীর জায়গাকে ধানি জমি দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিকদার খালিদ যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2019, 06:09 AM
Updated : 7 Dec 2019, 06:09 AM

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে এভাবে ভায়না নদী দখল করে খণ্ড খণ্ড করে মাছের ঘের ও চাষের জমিতে রূপ দেওয়া হচ্ছে।

গ্রামের মোজাম্মেল হক জানান, ১৯৮৫ সালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাদের সাত জনের নামে নদী বরাদ্দ নেওয়া হয়। এক বছর পর তারা তাদের দেওয়া বরাদ্দ জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে নবায়ন করার জন্য তাদের গ্রামের মেম্বার আব্দুর রশিদকে দায়িত্ব দেন।

“তার এক মাস পর রশিদ তাদেরকে জানান, ‘নদী আর তাদের নামে নাই।’ অন্য চারজন তা ইজারা নিয়ে রশিদ মেম্বারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।”

এ সময় খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন, রশিদ মেম্বার ও তার জামাই লোকমান কৌশলে নদী তাদের কাছ থেকে দখল করে নিয়েছেন।

এ দখলের প্রতিবাদ করায় নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের উপর বিভিন্ন সময় হামলা করে দখলদাররা বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গ্রামের বাসিন্দা তাহের আলি মোল্লা (৭৫) জানান, ১৯৮৬ সালে তারা রেজিস্ট্রি ও তহশীল অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের কোরবান আলী, শ্রীরামকাটি গ্রামের নূর মোহাম্মদ মন্ডল ও দিদার বক্স মন্ডল এবং কামারপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফের নামে জাল কাগজ তৈরি করে হাল জরিপের সময় রেকর্ড করে নেওয়া হয়েছে।

জালিয়াতির মাধ্যমে নদীকে ধানি খাস জমির দেখিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে।”

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরষিদের সদস্য তবিবর রহমান বলেন, ২০০১ সালে রাধানগর গ্রামের সাবেক মেম্বর আব্দুর রশিদ ও তার জামাই লোকমান হোসেন নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে ফেলে। তবে গ্রামবাসীর বাধায় তারা তাদের দখলে রাখতে পারেনি।

“গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলার প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা বাবু সরদার ওই জমি কিনে নিয়েছেন বলে নদীতে মাছ চাষ শুরু করেন। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করতে এসে হামলার শিকার হয়ে এখন ভয়ে কিছু বলে না।”

তবে ওই জমি নদীর নয় দাবি করে দখলকারী হিসেবে অভিযুক্ত মো. লোকমান হোসেনের দাবি ১৬ নম্বর রাধানগর মৌজায় ৫৪৮ দাগের ওই জমির মালিক নুর মোহাম্মদ, দিদার বক্স মণ্ডল, কুরবান আলী দফাদার ও আব্দুর রউফের কাছ থেকে তিনি কিনে নিয়েছেন।

স্থানীয় একটি চক্র তাদের কেনা জমিতে করা মাছের ঘের দখলের পায়তারা করছেন বলে পাল্টা দাবি করেন তিনি।

তবে তার দাবিকে অসত্য বলেছেন ইউনিয়ন তহশীল অফিসের নায়েব নেসার উদ্দিন আল আজাদ।

তিনি বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে জালিয়াতি করে নদীকে ধানি জমি হিসেবে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে।

“এসএ পর্চায় এটি নদী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে কিন্তু আরএস পর্চায় রয়েছে ধানি জমি।

ধানি জমি হিসেবে তৈরি করা কাগজপত্রে ব্যাপক অসঙ্গতি রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ বিষয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করবেন তিনি।

এদিকে শার্শা উপজেলার বেতনা নদীর সাথে ভায়না নদীর সংযোগ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বেতনা নদীর পানি বেড়ে ভায়না নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। দখলের পর নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি নিষ্কাশনে বাধার সৃষ্টি হয়ে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এ কারণে গত ২৮ অক্টোবর নদী পুনরুদ্ধারের দাবিতে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে এলাকার তিন শতাধিক নারী পুরুষের স্বাক্ষরিত এক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

এ অভিযোগ জমা দানের এক মাসের বেশি সময় পর সম্প্রতি এ ব্যাপারে কী পদেক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বিষয় নজরে আসেনি বলে জানান।

তবে ‘নদী কখনও খাস জমি হিসেবে ইজারা দেওয়া যায় না’ স্বীকার করে জেলা প্রশাসন বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলবেন।