পকেট কমিটি হবে না: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব নির্বাচনে কোনো পকেট কমিটি করতে দেওয়া হবে না বলে দলের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করেছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে তিনি মনোনয়ন বাণিজ্য করা নেতাদেরও সাবধান করে দেন।    

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2019, 03:19 PM
Updated : 5 Dec 2019, 03:19 PM

বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টাঙিয়ে বড় নেতা হওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের নেতা টাকা দিয়ে নয়, ত্যাগ দিয়ে হতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগে কর্মীর সংখ্যা কমে গেছে। বেড়েছে নেতার সংখ্যা। এখন পোস্টার-বিলবোর্ড লাগাতে মানুষ ভাড়া করতে হয়। আর এখন বিলবোর্ডে সকলেই নেতা।

“সামনে মানুষ দেখি এক, আর বিলবোর্ডে মানুষ দেখি আরেক। আমাদের এমন নেতা দরকার নেই। আমাদের দরকার সাচ্চা নেতা, দুঃসময়ের নেতা। আমাদের ত্যাগী নেতা ও যোগ্য নেতা দরকার।”

আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাঁচাতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিকে কখনও জায়গা দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশজুড়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। তাই সবাই সাবধান হয়ে যান।

সিলেটের নেতাদের উদ্দেশে কাদের বলেন, “দলের দুঃসময়ের যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের রেখে কোনো পকেট কমিটি হবে না। আপনারা পকেট কমিটি করা বন্ধ করুন। আওয়ামী লীগ থেকে কখনওই কাউকে বাদ দেওয়া হয় না; শুধুমাত্র দায়িত্বের পরিবর্তন হয়।”

আওয়ামী লীগে মনোনয়ন বাণিজ্যের দিন শেষ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখন আর মনোনয়ন বাণিজ্য করা যাবে না। যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করতেন তারা সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান।”

পোস্টার লাগালেই বড় নেতা হওয়া যায় না বলেও তিনি মনে করিয়ে দেন নেতাকর্মীদের।

“ঢাকা মহানগরে সম্মেলনে যারা বিশাল বিশাল বিলবোর্ড লাগিয়েছেন বা শ্লোগান দিয়েছেন তাদের নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি।”

তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের ২০ মিনিট সময় দিয়ে বলেন, “আপনার নিজেরা নিজেরা ঐকমত্যে পৌঁছান, নাহলে কেন্দ্র থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন।”

এর আগে বেলা ১২টার দিকে ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে বিমানযোগে সিলেট আসেন।

জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হক হানিফসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এসময় শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন ওড়ানো হয়।

সম্মেলন ঘিরে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। বর্ণিল প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন নিয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তোলেন সম্মেলনস্থল।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সদস্য সুজিত রায় নন্দী, মো. রফিকুর রহমান প্রমুখ।

এছাড়াও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সিলেটে নেতৃত্ব: জেলায় লুৎফুর-নাসির, মহানগরে মাসুক-জাকির

সম্মেলনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন লুৎফুর রহমান রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।

মহানগরে সভাপতি হয়েছেন মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।

বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ চার পদের নাম ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।

এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজেদের মধ্যে সমঝোতার জন্য শীর্ষ দুই পদের ৩২ প্রার্থীকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হলে তারা বিষয়টি নেত্রীর উপর ছেড়ে দেন। পরে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।