সরেজমিনে নগরীর টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কে ধুলা উড়তে দেখা গেছে। মাঝে-মধ্যেই অতিরিক্ত ধুলাবালিতে ধুলাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে চারপাশ।
সেখানকার সড়কে দিন-রাত ধুলা ওড়ার কথা তুলে গাজীপুর মহানগর দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার থোয়াই অং প্রু মারমা বলেন, “এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে হচ্ছে।”
ধুলায় আক্রান্ত হয়ে ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর মো. শাহাদত হোসেন, সার্জন মো. হোসেনুজ্জামানসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
“দিন শেষে ধুলায় একেবারে সাদা হয়ে যাই। হাত-মুখ ধোয়ার সময় কালো কফ বের হয়।”
এসব ধুলা নিয়ন্ত্রণে দিনে তিনবার পানি ছিটানো দরকার মনে করেন তিনি।
টঙ্গী থেকে গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রচণ্ড ধুলা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান গাজীপুর মহানগর উত্তর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার মাজহারুল ইসলাম।
ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অবিরত উড়তে থাকা ধুলার মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় বেশ ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন সদস্য ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
“এজন্য কয়েক দিন পরপরই অনেককেই ছুটিতে যেতে হচ্ছে।”
চালকরা এ ধুলার কারণে সিগন্যাল ঠিকমত দেখতে না পারায় মাঝে-মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানালেন এই ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা।
“কোনদিন দুইবার পানি ছিটালেও বেশিরভাগ সময়ই একবার পানি দেয়। এতে কিছুক্ষণের মধ্যেই পানি শুকিয়ে গিয়ে আবার ধুলার সৃষ্টি হয়।”
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘প্রতিদিন অন্তত দুইবার পানি ছিটানো হচ্ছে’ দাবি করে বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থপক মো. মোমেনুল ইসলাম বলেন, “তবে রোদের কারণে পানি শুকিয়ে যায়।”
ওই সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকায় অনেক সময় তাদের কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হয় বলেও জানান তিনি।
অতিরিক্ত ধুলা ও ধোঁয়ায় দূষিত বাতাসের কারণে মানুষের ব্রঙ্কাইটিস, হাঁচি, কাঁশি ও নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন জটিল রোগ হয়।
ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ভুগছেন ওই পথে চলাচলকারী মানুষজনও।
জয়দেবপুর থেকে সপ্তাহের ছয়দিন জেলা সদরে কলেজে আসেন ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক ইসমত আরা।
তিনিও জানান, সড়কে নাকে-মুখে মাস্ক ও ওড়না পেঁচিয়ে একরকম দম আটকে চলাচল করতে হয়।
“পরনের কাপড়, মাথার চুল সাদা হয়ে যায়।“
সায় মিলল গাজীপুর-কক্সবাজার রুটে চলা এনা পরিবহনের চালক মো. ইসমাইল হোসেন কথায়ও।
তিনি বলেন, “গাজীপুরের মত এত বায়ু দূষণ অন্যত্র দেখা যায় না।”
গত মাসে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বায়ুর শহর হিসেবে ঢাকার নাম উঠে আসে। তবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের হিসেবেও এর আশপাশের শহরগুলোর বাতাসও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে সোমবার গাজীপুরের বাতাস খুবই অবস্বাস্থ্যকর হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ ২৭৩ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। তবে এ সময় রাজধানী ঢাকার বাতাসের অবস্থা ছিল ‘তীব্র অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে, প্রতি ঘনমিটারে ৩১৫ পিপিএম।
গাজীপুরে গত ১০ দিনের মধ্যে ২৭ নভেম্বরে বাতাস ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর।
২১ নভেম্বর- ২ ডিসেম্বরের চিত্র
তারিখ | বাতাসে বস্তুকণার পরিমাণ |
২ ডিসেম্বর ২০১৯ | ২৭৩ পিপিএম |
২৯ ও ৩০ নভেম্বর ২০১৯ | ২১৫ পিপিএম |
২৭ নভেম্বর ২০১৯ | ১৬৫ পিপিএম |
২৩ ও ২৬ নভেম্বর ২০১৯ | ২২১ পিপিএম |
২৫ নভেম্বর ২০১৯ | ২০০ পিপিএম |
২৪ নভেম্বর ২০১৯ | ২৭৭ পিপিএম |
২২ নভেম্বর ২০১৯ | ২২২ পিপিএম |
২১ নভেম্বর ২০১৯ | ২১৪ পিপিএম |
বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম অর্থ্যাৎ পিপিএম এককে। এসব বস্তুকণাকে ১০ মাইক্রোমিটার ও ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস শ্রেণিতে ভাগ করে তার পরিমাণের ভিত্তিতে ঝুঁকি নিরূপণ করেন গবেষকরা।
বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ‘ভালো’ বলা যায়। এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে ‘মধ্যম’ মানের এবং ১০১-১৫০ হলে ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-৫০০ হলে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।