তিন বিভাগে পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনে

তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে পেট্রোল পাম্প ধর্মঘটে টানা দ্বিতীয় দিনের মত রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2019, 05:09 AM
Updated : 2 Dec 2019, 09:36 AM

বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির ডাকে ২৬ জেলায় অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতির কারণে তেলে চালিত যানবাহন একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।

পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ মোমিন দুলাল সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বগুড়া প্রতিনিধিকে বলেন, বেলা ১১টায় ঢাকার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে তাদের।

“সেই বৈঠকে আমাদের দাবি নিয়ে আলোচনা হবে। যদি সন্তোষজনক আলোচনা হয়, তাহলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”

গত ২৬ নভেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি মিজানুর রহমান রতন।

সে অনুযায়ী তিন বিভাগের সব জেলায় রোববার সকাল থেকে পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপোর শ্রমিকরা তেল উত্তোলন, বিপণন ও সরবরাহ বন্ধ রাখায় ২৬ জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়।

এই অবস্থায় বিপাকে পড়েন গাড়ি চালকরা। পাম্পে এসে তেল না পেয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়। পাম্পগুলোতে ১৫ দফা দাবি সম্বলিত পোস্টার টাঙিয়ে রাখতে দেখা যায়। 

তেল না পেয়ে রোববার দুপুরের পর থেকেই উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা কমে যা্য়। বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেসব বাস গ্যাসে চলে কেবল সেগুলোই তারা চালাতে পারছেন।

পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা দুলাল বলেন, তাদের ১৫ দফা দাবি পূরণ করতে সরকারকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা ধর্মঘটে যেতে ‘বাধ্য হয়েছেন’।

তাদের ১৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেওয়া,  জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের জন্য ৫ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা,  ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট করা, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা নেওয়ার নিয়ম বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলকভাবে ক্যালিব্রেশনের নিয়ম বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানী তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রোল পাম্পের পাশে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।

এদিকে পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে রংপুর নগরীর আলমনগর বাবুপাড়া এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিকরা।

সোমবার সকালে এ কর্মসূচিতে ‘রংপুর বিভাগীয় জ্বালানি পদার্থ বহনকারী ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের’ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মংলা বলেন, “জ্বালানি তেল সংরক্ষণাগার মেঘনা, পদ্মা ও যমুনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। তাদেরকে বাঁচতে দিন। এখানকার ট্যাংক লরির মালিক-শ্রমিকরা পেট্রল পাম্প ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত পোষণ করে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।’

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রংপুর প্রতিনিধি জানান, ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণনসহ কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি টানা দ্বিতীয় দিনের মত তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছেন পাম্প মালিকরা। ফলে মোটরসাইকেল, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল কমে গেছে।

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাজশাহী প্রতিনিধিকে বলেন, তেল না পেয়ে অনেক বাস ছাড়তে পারেনি। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

রাজশাহীর কয়েকটি জায়গায় খুচরা হিসেবে সামান্য তেল বিক্রি হলেও তার দাম চাওয়া হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে কৃষক ও সবজি ব্যবসায়ীরা। গ্রামের হাট থেকে সবজি কিনে তারা আর শহরে পাঠাতে পারছেন না যানবাহনের অভাবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সংস্থা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের যশোর প্রতিনিধিকে বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটের বাসগুলো প্রতিদিন তেল নিয়ে গাড়ি চালায়। লাগাতার ধর্মঘটে জ্বালানি সঙ্কটে পড়েছে তারা। ফলে যশোর-সাতক্ষীরা, বেনাপোল-খুলনার মত অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বোনো গাড়ি ছাড়ছে না।

মো. সেলিম নামে এক বাসচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খুলনা প্রতিনিধিকে বলেন, “তেল না পেলে গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি।”